প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ১৯ ডিসেম্বর মিশরের রাজধানী কায়রোতে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিবেন। তিনি বর্তমানে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে সেখানে অবস্থান করছেন। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আজ বাসস’কে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আজ ১৯ ডিসেম্বর, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিবেন।’ অধ্যাপক ইউনূস আল-আজহার আল শরীফ মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ এলতায়েবের আমন্ত্রণে মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিবেন।
গ্র্যান্ড ইমাম গত ১২ নভেম্বর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে রিটজ কালর্টন হোটেলে সাক্ষাতকালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ডি-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশনে যোগ দিবেন, যা ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন নামে পরিচিত। এই সম্মেলন মিশরের রাজধানীতে ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন, শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানসহ কয়েকটি ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশর পৌঁছেছেন ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় মিশরের রাজধানীতে পৌঁছেছেন। কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মিশরের পাবলিক বিজনেস সেক্টর মন্ত্রী মোহাম্মদ শিমি। পরে মন্ত্রীর সাথে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে সকালে ড. ইউনূস তিন দিনের সফর করতে মিশরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানরা ১৯ ডিসেম্বর এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার রাতে মিসরে গেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তাঁর উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি জানান, ডি-৮ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান তুরষ্ক, ইরানের মতো রাষ্ট্রপ্রধানগণ যোগ দেবেন। সেখানে তিনি তারুণ্য শক্তির সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলবেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধান এতে যোগ দেবেন। এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান। মালয়েশিয়ার শিক্ষামন্ত্রী ও নাইজেরিয়ার একজন উচ্চপস্থ কর্মকর্তা প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি বলেন, ‘ইনভেস্টিং ইন ইয়ুথ অ্যান্ড সাপোর্টিং স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ, শেপিং টুমরো’স ইকোনমি’ সম্মেলন ভবিষ্যতের অর্থনীতির জন্য যুব ও এমএসএমই ইস্যুতে সংস্থাটির গুরুত্বকে তুলে ধরে। এজন্য এই সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তরুণদের নিয়ে বৈশ্বিক সস্মেলনে কাজ করতে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। এসএমই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়গুলো এখানে আলোচনা হবে।
সম্মেলনে ড. ইউনূসের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি উপস্থিত থাকার কথা। ডি-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন, যা ডেভেলপিং-৮ নামেও পরিচিত। সংস্থাটি বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্কের মধ্যে পারস্পরিক উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য প্রতিষ্ঠিত। কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘ইনভেস্টিং ইন ইয়ুথ অ্যান্ড সাপোর্টিং স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ, শেপিং টুমরোস ইকোনমি’। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ড. ইউনূসের তৃতীয় বিদেশ সফর। তাঁর প্রথম সফর ছিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন। এরপর কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন। এর আগে ১১ থেকে ১৪ নভেম্বর কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে আজারবাইজানে যান অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সফরে প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দাবি-দাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।