একজন অভিনেত্রী ‘আম্মাজান’খ্যাত বিখ্যাত অভিনেত্রী শবনম। যিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও পাকিস্তানের কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। উপমহাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ধরা হয় শবনমকে। ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্র জীবনের শুরু এবং সারাজীবনে প্রায় ১৭০ টির মত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পাকিস্তানেই বেশি কাজ করতেন তিনি। সেখানে মোট ১৩ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার শবনমের রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। ৬০ এবং ৭০ এর দশকে পাকিস্তানি সিনেমায় নাদিম-শবনম জুটি মানেই ছিল সুপার ডুপার হিট সিনেমা। আরেকজন উপমহাদেশের সুফি সংগীতে প্রভাব বিস্তার করে রাখা ফতেহ আলী খান পরিবারের সন্তান রাহাত ফতেহ আলী খান। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। উর্দু ও হিন্দি ভাষার বহু গান দিয়ে পাকিস্তানের এই গায়ক নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন অনন্য উচ্চতায়।
দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা তারা। তবে দুজনেই পাকিস্তানের সংস্কৃতির সফল প্রতিনিধি। সম্প্রতি উপলক্ষ এলো দুজনের মুখোমুখি হওয়ার। সেখানে নেমে এসেছিল অদ্ভূত আবেগমাখা কিছু সময়। গেল সপ্তাহে রাহাত ফতেহ আলী খান পরপর দু’টি কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এই সফরের ব্যস্ততার মধ্যেই কিংবদন্তী অভিনেত্রী শবনমের সঙ্গে দেখা করেন রাহাত। ‘পাকিস্তান অ্যাম্বাসী অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত একটি ডিনারে অংশ নেন তারা। অভিনেত্রী শবনমের সঙ্গে দেখা হবে জেনেই ব্যস্ততার ফাঁকে সেই ডিনারে যেতে সম্মত হয়েছিলেন রাহাত ফতেহ আলী খান। জানা যায়, আয়োজনটিতে আগেই পৌঁছেছিলেন রাহাত। তিনি যখন শুনলেন শবনম অনুষ্ঠানস্থলে এসেছেন দ্রুত ছুটে যান তার কাছে। শবনমকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। উপস্থিত সবার কাছেই সেই দৃশ্য বেশ উপভোগ্য মুহুূর্ত হিসেবে ধরা দেয়। অভিনেত্রী ‘আম্মাজান’খ্যাত বিখ্যাত অভিনেত্রী শবনম। যিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও পাকিস্তানের কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সেই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক হলেন সারজিস আলম, পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফসহ আরও অনেকেই। রাহাত ফতেহ আলী খানের সঙ্গে দেখা ও তার চমৎকার আন্তরিকতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন শবনম। তিনি বলেন, ‘আমি সর্বশেষ গেল মার্চে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পাকিস্তান গিয়েছিলাম। তখন আমার সঙ্গে রাহাত দেখা করেছিলেন। এবার ঢাকায় দেখা হলো। সে আমাকে এতো সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে যা দেখে আমি নিজেও খুব মুগ্ধ হই। সেতো নিজেও অনেক বড় একজন শিল্পী। তবু বিনয় ও আন্তরিকতা নিয়ে শিল্পীর প্রতি শিল্পীর যে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন তিনি সেটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনেক বড় অনুপ্রেরণার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন।’
শবনমকে সর্বশেষ কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ সিনেমায় অভিনয়ে দেখা গেছে। সেই ছবিতে তিনি প্রয়াত নায়ক মান্নার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে তার দুর্দান্ত অভিনয় দেশের সবশ্রেণির দর্শকের মনে দাগ কেটেছিল। এরপর থেকে সবার কাছে তিনি ‘আম্মাজান’ হয়ে ওঠেছেন। সেই সিনেমার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও আর অভিনয়ে ফেরেননি শবনম।