শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন

বিদায় ২০২৪: বছরের আলোচিত ঘটনা হাসিনার পলায়ন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪

মহাকালের গর্ভে মিশে যেতে চলেছে আরও একটি বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে চলছে বিদায়ি বছরটিতে দেশের নানা অঙ্গনের ঘটনাপ্রবাহের খেরোখাতায় চোখ বুলিয়ে নেওয়ার পালা। বিদায়ী ২০২৪ বছরের আলোচিত ঘটনা হাসিনার পলায়ন।
দেড় দশকের বেশী সময় ধরে স্বৈরাচার সরকারের শাসনে অতিষ্ঠ দেশের জনগণ। তাদের না ছিলো ভোটাধিকার, না ছিলো মানবাধিকার। দীর্ঘ এক সময় গণতন্ত্র ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে এসেছে এদেশের মানুষ। আজ ৩৬ জুলাই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গণভবন ছেড়ে পালিয়েছেন অত্যাচারের খড়গ চালানো সেই স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশ পালানোর খবর শুনে জনতার বাঁধভাঙা উল্লাসের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলায়। এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হল এদেশের মুক্তিকামী জনতা। রাজধানীর রাজপথ হয়ে ওঠে আন্দোলন বিজয়ী ছাত্র-জনতার বিজয়ের ক্যানভাস। কোটি মানুষের স্রোতের অংশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা এসব ভবনে নানাভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ঘটনাবহুল ২০২৪ সালে রংপুরে ঘটে গেছে বহু আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। এমনকি রংপুরের কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীসহ বিশ্বজুড়ে নাড়াও দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতন ও অন্যায়ের প্রতিবাদে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের আত্মত্যাগ। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদের বুকে বিবেকবর্জিত নতজানু পুলিশের গুলি চালানোর সেই দৃশ্য দেখেছে বিশ্ববাসী।
পুলিশের ছোড়া একের পর এক রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আবু সাঈদের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রোহের আগুন হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার দমননীতি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন মোড় নেয়। ছাত্র-জনতার ক্রোধ আর ক্ষোভের দীর্ঘ নিশ্বাস পরিণত হয় অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে। তরান্বিত হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায় ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দলীয় নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার মসনদে থাকা শেখ হাসিনা।
বছরের মাঝামঝি পতন ঘণ্টা বাজানোর সূচনাটা যে রংপুর থেকে রচিত হবে, তা হয়তো কল্পনাতেও আসেনি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। তবে ২০২৪ এর শুরুতে শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনও ছিল আলোচনা-সমালোচনার টেবিলে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি-জামায়াতকে একঘরে রেখে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জিএম কাদের ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর আনোয়ারা ইসলাম রানীকে ঘিরে। যদিও শেষ পর্যন্ত আসন ভোটযুদ্ধে জিএম কাদেরই জয়ী হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দুর্গখ্যাত রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।
‘ভোট রাত ৩টার দিকে হয়েছে’
বিতর্কিত এ নির্বাচনের ছয় দিন পর ১৩ জানুয়ারি রংপুর-২ আসনের পরাজিত কৃষক লীগ নেতার বিস্ফোরক মন্তব্য ছিল বেশ আলোচনায়। ‘ভোট রাত ৩টার দিকে হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার ওরফে বিটু।
জিআই পণ্য হিসেবে হাঁড়িভাঙার স্বীকৃতি
উত্তরের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে আসা হাঁড়িভাঙা আমকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। এর আগে ২০১৬ সালে রংপুরের শতরঞ্জি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে স্থান করে নেওয়া হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রংপুরের সম্মানের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবু সাঈদের মৃত্যুতে তরান্বিত হাসিনার পতন
১৬ জুলাই কোটা সংষ্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় পুলিশসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিন প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে তারা। এতে পুলিশের গুলিতে মারা যান আবু সাঈদ। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। এর দুদিন পর ১৮ জুলাই পার্ক মোড় তাজহাট থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়।

অপরাধের দিক থেকে ২০২৪ সালকে বিশেষভাবে ঘটনাবহুল
অপরাধের দিক থেকে ২০২৪ সালকে বিশেষভাবে ঘটনাবহুল একটি বছর বলা যেতেই পারে। পুলিশের নথি থেকে ২০২৪-এ ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের খ-চিত্রের পাশাপাশি কিছু আলোচিত ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হলো এই প্রতিবেদনে। পুলিশের নথিপত্রের সূত্র মতে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৭৫৯টি। একই সময়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৪১৯টি, ছিনতাই বা দস্যুতা ১২৫৩টি এবং চুরির ঘটনা ৭৯২৬টি। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বেশি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খুন ৩০২৩টি, ডাকাতি ৩১৯টি, ছিনতাই ১২২৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৮৯৪১, চুরি ৯৪৭৫টি। অন্যদিকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও হাসপাতাল সূত্র মতে, গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতি বছর সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪০০৭টি। বিদায়ি বছরের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকা- ছিল পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের ঘটনা। সর্বশেষ সংঘটিত হত্যাকা-ের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে চলন্ত জাহাজের ভেতরে ৭ নাবিককে জবাই করে হত্যা। এক হত্যাকা-ে এত বেশিসংখ্যক নিহতের সংখ্যা ২০২৪ সালের তালিকায় আর নেই। আবার বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় শেষ ৫ মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডাকাতি হয়েছে ৪৭টি, ছিনতাই ১৩৩টি, ৩৩৭ খুন ও ৭১৬টি চুরি। অক্টোবরে ডাকাতি ৬৮টি, ছিনতাই ১৫৭টি, খুন ৩৯৯টি, চুরি ৭২২টি। সেপ্টেম্বরে ডাকাতি ৫৭টি, ছিনতাই ১০৪টি, খুন ৫৮৩টি, চুরি ৬০৫টি। আগস্টে ডাকাতি ৩৭টি, ছিনতাই ৭০টি, খুন ৬১৮টি, চুরি ৩৮১টি। জুলাইয়ে ডাকাতি ২৭টি, ছিনতাই ১০১টি, খুন ৩৩৪টি, চুরি ৭৮৫টি। জুনে ডাকাতি ৩৬টি, ছিনতাই ১০৩টি, খুন ২৬৮টি, চুরি ৭৪৫টি। মে মাসে ডাকাতি ৩১টি, ছিনতাই ১১৫টি, খুন ২৫৯টি, চুরি ৭২৬টি। এপ্রিলে ডাকাতি ২৯টি, ছিনতাই ৯৭টি, খুন ২৯৬টি, চুরি ৮১২টি। মার্চে ডাকাতি ২৫টি, ছিনতাই ১৩৮টি, খুন ২৩৯টি, চুরি ৮৬৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে ডাকাতি ৩৩টি, ছিনতাই ১২১টি, খুন ২৪০টি, চুরি ৮২০টি। জানুয়ারি মাসে ডাকতি ২৯টি, ছিনতাই ১১৪টি, খুন ২৩১টি, চুরি ৭৪৯টি।
মোট হিসাবে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৪১৯টি। ছিনতাই হয়েছে ১২৫৩টি। খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৫৯টি। চুরি হয়েছে ৭৯২৬টি। এর মধ্যে গত আগস্টে পটপরিবর্তনের পর নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে খুন ও ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনা বেড়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডাকাতি ২৭টি, ছিনতাই ১০৭টি, খুন ২১৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২৬৫টি, চুরি ৭৮৪টি। ফেব্রুয়ারিতে ডাকাতি ২১টি, ছিনতাই ৯৭টি, খুন ২২২টি, চুরি ৭২৫টি। মার্চে ডাকাতি ৩০টি, ছিনতাই ১১১টি, খুন ২৬৮টি, চুরি ৭৯৭টি। এপ্রিলে ডাকাতি ২০টি, ছিনতাই ১১৮টি, খুন ২৯৬টি, চুরি ৭৭৬টি। মে মাসে ডাকাতি ৩৫টি, ছিনতাই ৯৫টি, খুন ২৪৫টি, চুরি ৮০৭টি। জুনে ডাকাতি ২৭টি, ছিনতাই ১০৫টি, খুন ২৭২টি, চুরি ৮৩১টি। জুলাই মাসে ডাকাতি ৩৯টি, ছিনতাই ৯৪টি, খুন ২৯৬টি, চুরি ৮০২টি। আগস্টে ডাকাতি ২২টি, ছিনতাই ১০৪টি, খুন ২৫৩টি, চুরি ৮৮৯টি। সেপ্টেম্বরে ডাকাতি ২১টি, ছিনতাই ১০৬টি, খুন ২৩৮টি, চুরি ৮৩০টি। অক্টোবরে ডাকাতি ২২টি, ছিনতাই ১০৬টি, খুন ২৫৮টি, চুরি ৮৬৮টি। নভেম্বরে ডাকাতি ২৫টি, ছিনতাই ৭৯টি, খুন ২২৭টি, চুরি ৬৬৪টি। ডিসেম্বরে ডাকাতি ৩০টি, ছিনতাই ১০৫টি, খুন ২৩৩টি, চুরি ৭০২টি। ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাকাতি ৩১৯টি, ছিনতাই ১২২৭টি, খুন ৩০২৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৮৯৪১টি, চুরি ৯৪৭৫টি। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩-এর চেয়ে ২০২৪ সালে কিছু অপরাধ বেড়েছে। এ ছাড়া পুলিশের দেওয়া তথ্যের বাইরেও ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আর জেনেভা ক্যাম্পে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি অপরাধ। সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার অনেক ভুক্তভোগীই অতিরিক্ত ঝামেলা এড়াতে পুলিশের শরণাপন্ন হতে চান না বলে কিছু ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। ফলে পুলিশের নথি থেকে পাওয়া তথ্যচিত্র কখনই প্রকৃত ঘটনার চিত্র নয়। প্রকৃত ঘটনা আরও অনেক বেশি। অনেক অপমৃত্যুর মামলার ঘটনাও পরে হত্যাকা-ে রূপ নেয়।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, বিগত অনেক বছরের চেয়ে ২০২৪ সালে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বেশি। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। পুলিশ এখনও সেভাবে মাঠে নামতে পারেনি। তারা এখনও ট্রমার মাঝে আছে। অন্তর্র্বতী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের সময়ে ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনার পদে একাধিকবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেনা সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত সুফল এখনও মিলছে না। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই সরকার পুলিশে সংস্কার আনছে।
আনোয়ারুল আজীম ওরফে আনার হত্যা
আনোয়ারুল আজীম ওরফে আনার হত্যার ঘটনাটি ঘটে ১৩ মে ভারতের কলকাতায়। হত্যার পর মাংস টুকরা টুকরা করে কিছু ড্রেনে, কিছু বাথরুমের কমোডে, কিছু পুকুরপাড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশে অপহরণ আর কলকাতায় হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত কর্মকর্তার টেবিলে ফাইলবন্দি আছে। এ হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল ২৪ নভেম্বর। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৯ জন।
গত ১৩ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন আনোয়ারুল আজীম। এ হত্যায় জড়িত অভিযোগে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া এবং হত্যার সময় কলকাতায় অবস্থান করা শিলাস্তি রহমান প্রথমে গ্রেপ্তার হন। পরে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম (মিন্টু) এবং একই কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদকেও গ্রেপ্তার করে ডিবি। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী নামের আরও দুজন। আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম ছাড়া প্রত্যেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবি সূত্র বলছে, হত্যায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রধান ছিলেন চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন।
জাপান প্রবাসী আরিফুল ইসলাম হত্যা
গত ২ জুন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আরিফুল ইসলাম নামে এক জাপান প্রবাসীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় পারভীন আক্তার নামে এক কানাডা প্রবাসী নারীর নাম সামনে আসে। আরিফুলের মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পায় পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই রেপিস্ট (ধর্ষক), ব্ল্যাকমেলার। সে তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট, ব্ল্যাকমেলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’
টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ৪ খুন
১৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা
২৫ নভেম্বর সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় দাসকে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন চিন্ময়কে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয় এবং জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ খবর পেয়ে তার অনুসারীরা মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে এবং কারাগারে নিয়ে যেতে বাধা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে আদালত চত্বরে বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি, মোটরসাইকেল ও কোর্ট বিল্ডিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় এক আইনজীবীর চেম্বার ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ঢিলে আদালত মসজিদ কমপ্লেক্সের কাচ ভেঙে যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আদালতের বিপরীতে কনভেনশন সেন্টার এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সিলেটে শিশু মুনতাহা খুন
ঘটনাটি ঘটে সিলেটের কানাইঘাটে গত ৩ নভেম্বর। সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে পাঁচ বছর বয়সি শিশু মুনতাহা। পরে আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকালে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। মুনতাহার নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে আলোচনা চলছিল। শিশুটিকে উদ্ধারে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবারসহ কয়েকজন প্রবাসী। এর মধ্যে ১০ নভেম্বর শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, সাবেক গৃহশিক্ষিকা, তার মা ও নানি তিনজন মিলেই হত্যা করে পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে। হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা। ১০ নভেম্বর ভোরে মাটিতে পুঁতে ফেলা লাশ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গৃহশিক্ষিকার মা। এরপর অন্য খুনিরাও। হত্যাকা-ে জড়িত মাবিয়া খাতুন ও তার দুই সহযোগী মোসলেম ও রবিদাসকে গ্রেপ্তার করে।
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন

গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের মাঝেরচর এলাকায় মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ থেকে পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত দুজন হাসপাতালে মারা যায় এবং আরও একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ২৫ ডিসেম্বর আকাশ ম-ল ওরফে ইরফান নামে এক নাবিককে গ্রেপ্তার করে। এখন পর্যন্ত বছর শেষের আলোচিত হত্যাকা- এটিই।
বছরের সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা
চলতি বছরে সর্বশেষ আলোচনায় যে অপরাধমূলক কর্মকা-ের অভিযোগ উঠেছে সেটি হচ্ছে সচিবালয়ের আগুন। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে এটিই বিদায়ি বছরের শেষ আলোচিত বড় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সচিবালয়ে আগুনের ঘটনাটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ঘটনাপ্রবাহ এবং অগ্নিকা-ের ধরন দেখে মনে করছেন, এর পেছনে কোনো মহলের হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com