রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় পিএসটিএসের পুলিশ সুপার ও পুলিশ সদরদফতরের সাবেক এআইজি মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ সচিব নাসিমুল গনির সই করা একটি প্রজ্ঞাপন এ আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় করা মামলা মোতাবেক গত ১৩ নভেম্বর রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় মহিউদ্দিন ফারুকীকে। তাকে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী গত ১৩ নভেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি খাগড়াছড়ি এপিবিএন ও বিশেষত ট্রেনিং সেন্টারে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ-
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০২২ সালের মার্চে মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী আয়শা ইসলাম ওরফে মৌ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে ফেসবুকে আয়শার পরিচয় হয়। সম্পর্কের প্রথম থেকে আয়শাকে দেখা করতে প্রলুব্ধ করেন মহিউদ্দিন। এরপর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আয়শার বাসায় যাতায়াত করেন। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আয়শাকে বিয়ে করতে চান। পরে আয়শার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে আয়শা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গর্ভপাতের পর মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আয়শা। তবে পরে মহিউদ্দিন কৌশলে তার সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং সহকর্মীদের কাছে আয়শাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আয়শাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে চাপের মুখে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন মহিউদ্দিন ফারুকী। ১৬ এপ্রিল আয়শা জানতে পারেন, তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহিউদ্দিন ফারুকী আবারও আয়শার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়াও মহিউদ্দিন ফারুকী র্যাবে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন মানুষকে ক্রসফায়ার, হত্যা ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরে ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ক্রসফায়ারের কারিগর র্যাবের কসাই খ্যাত মহিউদ্দিন ফারুকীর ফাঁসি চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মহিউদ্দিন ফারুকী বর্তমানে গ্রেফতার আছেন। ‘র্যাবের কসাই’ নামে পরিচিত এই ফারুকীর জঘন্য অপরাধের বিচার না হলে দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হবে। সুস্থ বিচারের মাধ্যমে তার ফাঁসির দাবিও করেন ভুক্তভোগীরা।