শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

কানাডায় ইসলাম ও মুসলমান

ড. ইকবাল কবীর মোহন
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা। দেশটির অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পাশে। এর আয়তন ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৮২১ বর্গমাইল। উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত স্বল্প জনসংখ্যার দেশ কানাডা।
এর লোকসংখ্যা মাত্র চার কোটি। দেশটির শতকরা ৮০ ভাগ লোক দক্ষিণাঞ্চলে বাস করে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ৪১ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত কানাডা। দেশের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে জনগোষ্ঠীর মধ্যেও একটি বৈচিত্র্য আছে। দেশটির শতকরা ৪৮ ভাগ লোক ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এবং ৩১ ভাগ ফরাসি। এ ছাড়া জার্মান, ইতালি ও আমেরিকান-ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকও আছে। কানাডা একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। ১২টি প্রদেশ ও দুইটি টেরিটরি নিয়ে এই ফেডারেল রাষ্ট্র গঠিত। দেশটির জনসংখ্যার ৭.২ শতাংশ খ্রিস্টান, ৩.২ শতাংশ মুসলিম, ১.৫ শতাংশ হিন্দু, ১.১ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ২৩.৯ শতাংশ লোকের কোনো ধর্ম নেই। এ হিসাবে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় মুসলিম। বিশ্বের অন্যতম বহু সাম্প্রদায়িক ও শান্তির দেশ কানাডা। এখানে নেই কোনো সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও বৈরিতা এবং ধর্মভিত্তিক সংঘাত। ফলে মুসলমানদের জন্যও কানাডায় রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা। বর্তমানে কানাডায় ১৭ লাখের বেশি মুসলমান আছে, যা মোট জনসংখ্যার ৬.৬ শতাংশ। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কানাডায় ইসলামের আগমন কানাডায় ইসলামের ইতিহাস শত বছরের পুরনো। ১৮৭১ সালের আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩। এ দেশে মুসলমানরা প্রথমে কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ে স্থাপনের সময় আগমন করে। পরবর্তী সময়ে আলবার্টায় কৃষিকাজ এবং অন্যান্য প্রদেশে কল-কারখানায় কাজের জন্য মুসলমানরা ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আগমন করে। উচ্চশিক্ষার জন্যও মুসলমান ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ফলে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬০ সালের পর থেকে কানাডায় মুসলিম ইমিগ্র্যান্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যেখানে ১৮৭১ সালে দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৩ জন; ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী তা ৯৮ হাজার ৯৭০ জনে উন্নীত হয়। ১০ বছর পর ১৯৯১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৩ হাজারে। ২০০১ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখেরও বেশি। বর্তমানে মুসলমানদের এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখে। কানাডায় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকায় দেশটিতে বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা আগমন করার জন্য আকৃষ্ট হচ্ছে। যেসব দেশ থেকে প্রধানত মুসলিমরা কানাডায় এসে বাস করে সেসব দেশ হলো পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আলজেরিয়া, লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং ভারত।
কানাডার রাজনীতি, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানদের অবদান: মুসলমানরা কানাডার উন্নতি, অগ্রগতি ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। দেশটির রাজনীতিতেও মুসলমানরা দৃশ্যমান অবদান রাখছে। মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন মুসলিম এমপি ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে সক্ষম হয়েছেন। কানাডায় অবাধ স্বাধীনতা থাকায় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে মুসলমানদের কথা, দাবিদাওয়া ইত্যাদি প্রচারের ব্যবস্থা আছে। দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরে বহু মুসলিম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন, যা যেকোনো অমুসলিম রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম অধ্যাপকের উপস্থিতি লক্ষ করার মতো। ব্যবসা-বাণিজ্যেও মুসলমানরা অন্য সম্প্রদায়ের চেয়ে কম এগিয়ে নেই।
সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে মুসলমানদের অবদান: কানাডার সমাজে মুসলমানদের কর্মতৎপরতা লক্ষণীয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অনেক মুসলমান ব্যাপক তৎপর রয়েছে। তারা মসজিদ নির্মাণ, ইসলামিক সেন্টার স্থাপন, মক্তব-মাদরাসা এবং ইসলামী স্কুল স্থাপনে অগ্রসর ভূমিকা পালন করছে। কানাডার আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে প্রথম মসজিদ ‘আল-রাশিদ’ নির্মিত হয় ১৯৩৮ সালে। বর্তমানে কানাডায় প্রায় এক হাজার ১৫০টি মসজিদ রয়েছে। দিন দিন মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের সংখ্যাও বাড়ছে।
রাজধানী টরন্টোতে মুসলমানদের উদ্যোগে সর্ববৃহৎ ইসলামী ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্স আছে। এই কমপ্লেক্সে একটি বড় মসজিদ রয়েছে, যেখানে পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে পার্কিং লট, ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ এবং ইসলামী স্কুলও রয়েছে। প্রায় ৫০ বিঘা জমির ওপর পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কানাডার প্রতিটি শহরে এ রকম অনেক ইসলামিক সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।
জানা যায়, কানাডার প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলমান নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। প্রতি বছর রমজানে কানাডার বেশির ভাগ মসজিদে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আরো উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো দেশটিতে মুসলিম নারী, কিশোর-তরণীরা অবাধে ও নিঃসংকোচে হিজাব পরে চলাচল করে। এতে কোনো বাধা বা ভয় নেই। ছোটখাটো প্রতিকূলতা ছাড়া কানাডার মুসলমানরা ভালোই আছে। লেখক : প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাবেক অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি.




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com