শীতের আগেই গঙ্গাচড়ার ইট ভাটার মালিকরা তাদের তৈরির কাজ শুরু করে। সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অনুমোদন থাক বা না থাক তারা তাদের শুরু করে অনায়াসে। আর সেদিক ফিরেও তাকায় না পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের দাবিতে অর্ধশতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলার বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পানাপুকুর এলাকায় কৃষি জমিতে এক যুগ ধরে চলছে ওই অবৈধ ইট ভাটা। লিখিত অভিযোগে কৃষকেরা উল্লেখ করেছেন, ইট ভাটার মালিক হচ্ছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহীদ চৌধুরী ওরফে দ্বীপ। ২০১২ সালে প্রভাব খাটিয়ে ফসলি কৃষি জমিতে এবিসি ব্রিকস নামে ওই অবৈধ ইট ভাটা তিনি গড়েন। এরপর থেকে আশপাশের অনেক কৃষককে প্রলোভনে ফেলে কৃষিজমির উপরি ভাগের মাটি (টপ সয়েল) কিনে ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। এতে জমিগুলোতে তিন থেকে চার ফুট করে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় পাশে থাকা উঁচু কৃষিজমি ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ভাটার আশপাশের কৃষিজমিতে ফলন কমেছে। ফলদ গাছপালায় ফল ধরছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর আগে ৩১ ডিসেম্বর ওই ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে কাঁচা ইট ধ্বংসসহ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই ইট ভাটা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিনে দুপুরে ওই ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা ইট তৈরির জন্য ট্রাক্টরে করে কৃষি জমির মাটি সংগ্রহ করে ভাটায় এনে রাখা হচ্ছে। এ সময় ইটভাটা চত্বরে শ্রমিকেরা কাঁচা ইট তৈরি করছিলেন। আবার কেউ পোড়ানোর জন্য ভ্যানে করে কাঁচা ইট চেম্বারে নিচ্ছিলেন। চেম্বারের পাশেই ইট পোড়ানোর জন্য গাছের গুঁড়ি স্তূপ করা হয়েছে। আবাদি কৃষিজমির মধ্যখানে গড়ে তোলা হয়েছে ওই ইটভাটা। ভাটার চারদিকে রয়েছে কৃষিজমি। কৃষকেরা জানান, এসব জমিতে বছরে ধানসহ তিনটি ফসলের চাষ করেন তাঁরা। ওই এলাকার কৃষক হাবীব মিয়া বলেন, ‘ধানের জমির তিন থেকে চার ফুট দও (গর্ত) করি মাটি কিনিয়া ভাটাত নিয়া যায়া ইট বানেয়া পোড়ায়চন। অনেক জমিয়ালা টাকার লোবোতে (লোভে) মাটি ব্যাচে দেওচোন। সেই জমিত আর আবাদ হয়চে না। মোর জমির পাশোত এক জমিয়ালার মাটি গর্ত করি খুঁড়িয়া গত বছর ভাটাত নিয়া গেইচে। বন্যার সমায় পাড় ভাঙিয়া মোর জমির ক্ষতি হইচে। ভাটার কারণে জমিত আর ধান ঠিকমোতন হয়চে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ চৌধুরীর ওই অবৈধ ইটভাটা বর্তমানে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজন রেজাউল করিম ও মাহফুজার রহমান। জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের ইটভাটার কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়া ইট পোড়াই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা কেন আগবাড়িয়ে মাটি কাটা বন্ধ করতে যাব। পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক কমল কুমার বর্মণ জানান, এবিসি ব্রিকস নামে ওই ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই। সম্প্রতি সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।