‘গণতন্ত্র মানেই তীব্র সমালোচনা হবে এবং সরকার সব শ্রবণ করবে’ মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব)।
তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) বলেছে, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এগুলো তো হাসিনার কথার প্রতিধ্বনি। হাসিনা সরকার ও রাষ্ট্রকে এক করে দিয়েছে। এই সরকার তো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। আর গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে, আলোচনা-সমালোচনা। তীব্র সমালোচনা হবে এবং সরকার সব শ্রবণ করবে। এরপরে জনকল্যাণের পক্ষে যেসমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার, সেসমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে, দৃঢ়তার সাথে বাস্তবায়ন করবে। এটাই তো সরকার।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের বিরোধিতা অপরাধমূলক। কিন্তু, সরকারের বিরোধিতা তো অপরাধমূলক নয়। সরকারের বিরুদ্ধে যত সমালোচনা হবে, সেই সরকার যদি সৎ এবং জনগনের মুখাপেক্ষীর সরকার হয়, তাহলে সেই সরকার তো সমালোচনাকে আমন্ত্রণ করবে। অথচ মাউশি বলে দিলো সরকার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।
রিজভী বলেন, জনপ্রশাসনের সচিবের নামে কোটি টাকার দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। তারপরও সে কী করে সেখানে বহাল থাকে? এ ধরনের একটা ঘটনা জানার পরও উনি কী করে জনপ্রশাসনের সচিব হিসেবে রয়েছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার তো বিপ্লবী সরকার হওয়ার কথা ছিল। সমস্ত দোসরকে উৎপাটন করে জনগণের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছিল তাদের দিয়েই তো প্রশাসন চলার কথা। সেই দোসররা আবার সচিবালয়ের ভেতরে মিছিল করে, দাবি-দাওয়া পেশ করে। তারা মনে করছে, এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। পৃথিবীর বহুদেশে বিপ্লবের পর থেকে পুরোপুরিভাবে নতুন কাঠামো তৈরী করে সেখানে নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা হয়েছে। আজকে কী করে সচিবালয়ের ভেতরে সেই পুরোনো দোসরদের লোকেরা আন্দোলন করে এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়?
তিনি বলেন, এই সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করল, এটাতো জনগণ প্রত্যাশা করেনি। গণবিরোধী আমলাদের পরামর্শে এটা হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র-সমাজ থেকে নীতি-নৈতিকতা একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এত জায়গা জমি লাগবে কেন? ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করতে হবে কেন? কিন্তু তিনি করেছেন। এগুলো যদি না করতেন, তাহলে টিকে থাকতে পারতেন। তাকে পালাতে হতো না। উনি পালিয়েছেন। কারণ, ওনার মনের মধ্যে তো ভয় আছে। তিনি আয়নাঘর করেছেন, ক্রস ফায়ার করেছেন। শুধু তার পথের কাঁটা সরানোর জন্য এগুলো করেছেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, ছেলের জন্য, ভাগ্নে-ভাগ্নির জন্য কাঠার পর কাঠা সরকারি প্লট আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি প্লট যাদের আছে, তারা বাড়ি-ঘর নিতে পারে না। ওদের প্রত্যেকেরই বাড়ি-ঘর আছে। পূর্বাচলে ছেলে-মেয়ে, ভাগ্নে-ভাগ্নির নামে তারা ৬০ কাঠা জমি দখল করেছে। পূর্বাচলে নাকি টিউলিপ সিদ্দিকেরও জমি আছে। যে কিনা ব্রিটেনের এমপি এবং মন্ত্রী ছিলেন। উন্নত দেশে থেকে, উন্নত নৈতিকতার মানুষ হয়েও রক্তের যে জেনিটিক্যাল ধারা রয়েছে, সেখানে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, জুলাই-আগস্টে যে জনস্রোতের তারল্য সৃষ্টি হয়েছে, এর ভিত্তি রচনা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশ নায়ক তারেক রহমান। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সাথে কখনোই আপস করেননি।
ডিইএব’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রকৌশলী মো: হানিফের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি’র সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: পারভেজ রেজা কাকন প্রমুখ।