কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর বুক জুড়ে ভেসে উঠা চরে সবুজের সমারোহ। নদী মাত্রিক এলাকা হিসেবে তিস্তা নদীর বুক জুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় সবুজ পাতা দোল খাচ্ছে মাঠের পর মাঠ। কোথাও ভুট্টা, কোথাও আলু, বাদাম, পেঁয়াজ ও বীজধনে সহ বিভিন্ন ধরনের রবি শস্যে এখন দোল খাচ্ছে-কৃষকের স্বপ্ন। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থৈ থৈ করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর চর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। তিস্তার ভাঙ্গন ও বানের পানিতে সম্বল হারানো মানুষগুলো এখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফসল উৎপাদনে। বিশেষ করে উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, শুকদেব, দড়িকিশোরপুর, মধ্যগোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চর সহ বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার কৃষক তিস্তা নদীতে ভেসে উঠা চর গুলোতে আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন সহ বিভিন্ন প্রকার ফসল ও শাক সবজি চাষ করছেন। এসব এলাকায় তিস্তা নদীর বুক জুড়ে এখন সবুজ পাতায় ছেঁয়ে গেছে। বিশেষ করে আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ ও বাদামের সবুজ গাছ কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটিয়ে তুলেছেন। এদিকে গত রবি মৌসুমে কৃষক আলু ও পেঁয়াজ চাষে লাভবান হওয়ায় এবার অধিক হারে আলু ও পেঁয়াজের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও ভালো পরিচর্যায় এবারও আলু, বাদাম ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন। দরিকিশোরপুর চর এলাকার আলু চাষি আব্দুল হামিদ পিন্টু জানান, তিস্তায় এখন পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার বুকে ভেসে উঠেছে ছোট বড় অনেক চর। এ চরে প্রায় ৬ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় অনেক ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসে বালু। এ কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জমিতে ফসল ফলানো হয়। ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে সেচ পেতে অনেক কষ্ট পেতে হয় আমাদের। পানিয়ালের ঘাট এলাকার কৃষক ফরিদ শেখ জানান, তিস্তার গ্রাসে আমাদের কয়েক বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। এ জমি গুলো চর হিসেবে ভেসে উঠেছে। তার মধ্যে ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আশা করি ফলন ভালো হবে। তবে এখান থেকে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না, ফলে লাভ তুলনামূলক কম হয়। এছাড়া তিস্তায় ভেসে উঠা বিভিন্ন চর এলাকার চাষি সাহেব মিয়া, রানা মিয়া ও মতিন মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, তিস্তার বুকে ভেসে উঠা ছোট বড় চর গুলোতে অনেক আশা নিয়েবিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য চাষ করা হচ্ছে। আশায় আশায় বাদামের চাষ করা হচ্ছে। মাত্র তিন থেকে চার মাস এসকল রবি শষ্য চাষ করা যাবে। তারপর আবার অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদীতে পানি ভরে যাবে। তখন কিছু কিছু বাদাম পানিতে তলিয়ে যাবে। তারপরেও অনেক আশা নিয়ে রবি শষ্য চাষ করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, তিস্তায় ভেসে উঠা চরে এখন সবুজের সমারহ দেখা যাচ্ছে। তিস্তার ভাঙ্গনে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা এখন বিভিন্ন ধরনের রবিশষ্য চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশাবাদী তিস্তায় ভেসে উঠা চরে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ থেকে তাদের ক্ষতি গুলো পুষিয়ে নিতে পারবেন।