মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তিস্তা মেগাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলনের বিশাল পদযাত্রা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলায় হেফাজত ইসলামের কাউন্সিল গুণিজন সমাবেশ শাহজাদপুরে জ্বিন হাজির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশের সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রক্ষায় নাগরিক সচেতনা সেমিনার নগরকান্দায় বার্ষিক ক্রীড়া ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন তাড়াশে ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় সেড নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন সদরপুরে ২ মণ জাটকা ইলিশ জব্দ: মৎস ব্যবসায়ীকে জরিমানা কালিয়ায় ৩ দিন ব্যাপী ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন

সঙ্কট-সংগ্রামে রহমতের ছায়া

নাজমুল হুদা মজনু
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মুমিনদের অন্তরে অঙ্কিত আকাক্সক্ষা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা কিন্তু এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। প্রতিটি পদক্ষেপেই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। তাই এ পথের পথিকদের কোনো ব্যাপারে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা সমীচীন নয়। কেননা, আজকে যে চারাগাছ কালকে সে মহীরুহ। ঈমানদাররা মূলত সাহস সঞ্চয় করে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। মুমিনদের আশ্বস্ত করতে কুরআন কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমরা হতাশ হয়ো না। চিন্তিত হয়ো না। যদি মুমিন হও তোমরাই বিজয়ী হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৯)। ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য প্রতিটি মানুষের জীবনেই বহমান নদীর স্রোতধারার মতো; কখনো তা বাড়ে বা কমে। জোয়ার-ভাটা জীবনের স্বাভাবিক রীতি-প্রকৃতির অংশবিশেষ।
মুমিনদের জন্য শস্যক্ষেত্র এ দুনিয়ায় কোনো নেককাজ ও পাপকেই ছোট মনে করা যাবে না। কোনো কথার কথা নয়; এটি মহামহিম প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হুকুম ও বিধান।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর বান্দাদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘সে দিন সমগ্র মানব সন্তান দলে দলে ভাগ হয়ে যাবে, যাতে করে তাদেরকে তাদের কর্মকা- দেখানো যায়; অতএব যে ব্যক্তি এক জাররা (অণু) পরিমাণ কোনো ভালো কাজ করবে (সে দিন) তাও সে দেখতে পাবে; (ঠিক তেমনি) কোনো মানুষ যদি অণু পরিমাণ খারাপ কাজও করে, তাও সে (তার চোখের সামনে) দেখতে পাবে।’ (সূরা আয-যিলযাল : ৬-৮)
সে দিন মানুষ নিজ কৃতকর্মের ফল দেখতে পাবে। এটি হচ্ছে আরো কঠিন ও ভয়াবহ পরিস্থিতি। যেখানে আমলনামা দেখানো হবে, তারা সে দিকেই যাবে, যাতে তারা আমলনামা দেখতে পায় এবং কর্মফল লাভ করে। নিজের কাজের মুখোমুখি দাঁড়ানো মানুষের জন্য অনেক সময় তার প্রতিফল ভোগ করার চেয়েও নির্মম ও কষ্টকর হয়ে থাকে। মানুষ যখন নিজের বিবেকের দংশনে ও অনুশোচনায় জর্জরিত হয়, তখন নিজের ঘৃণ্য অপকর্ম একাকী দেখেও তার বিরক্তি লাগে। আর মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ তায়ালা ও সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে নিজের কৃতকর্মের মুখোমুখি হওয়া তো আরো মারাত্মক ব্যাপার। শুধু আমলনামার সম্মুখীন হওয়া বা দেখাও একটি ভয়ঙ্কর শাস্তি। আর যে ‘জাররা’ পরিমাণও খারাপ কাজ করবে, আর নেককাজ করবে তাও সে দেখতে পাবে।
জাররা বলতে ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে, সূর্যরশ্মিতে প্রতিভাত হয় এমন ধূলিকণা; কেননা তখনকার সময়ে এগুলোই ক্ষুদ্রতম বস্তু হিসেবে ‘জাররা’র প্রতিশব্দ গণ্য হতো। তবে এখন আমরা জানি যে, ‘জাররা’ এমন জিনিস, যা সূর্যালোকে দৃশ্যগোচর ধূলিকণার চেয়েও অনেক ক্ষুদ্র। ধূলিকণা তো খালি চোখে দেখা যায় কিন্তু ‘জাররা’ বা পরমাণুকে বৃহত্তম অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। বৈজ্ঞানিকদের মস্তিষ্কে তা ‘স্বপ্ন’ মাত্র। আজ পর্যন্ত কেউ একে খালি চোখেও দেখেনি, অণুবীক্ষণ দিয়েও দেখেনি, যা কিছু দেখেছে, তা হচ্ছে পরমাণুর আলামত মাত্র। এত ক্ষুদ্র পরিমাণ ভালো বা মন্দ কাজের ফলও মানুষকে ভোগ করতে হবে। সুতরাং মানুষের ছোট বা বড় কোনো কাজকেই তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়। এ তো ছোট জিনিস, এর হিসাবও নেই, ওজনও নেই- এরূপ বলাটা আদৌ ঠিক নয়। সেই সূক্ষ্মতম দাঁড়িপাল্লা যেমন পরমাণুকে মাপতে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে কিংবা শূন্যে উঠে যায়, ঠিক তেমনি নিজের ক্ষুদ্রতম আমলের সামনে গিয়েও মানুষের অনুভূতিশক্তি কেঁপে উঠবে। মুমিনের অন্তর ছাড়া আর কোনো কিছুর সাথে এই দাঁড়িপাল্লার তুলনা হয় না। কেননা, এই অন্তর অণু পরিমাণ ভালো বা মন্দ কাজকেও অনুভব করে। অথচ পৃথিবীতে এমন হৃদয়ও আছে যা পাহাড় সমান পাপ দেখেও কাঁপে না। সেসব হৃদয় পাহাড়ের চেয়ে বড়, ভালো ও কল্যাণের কাজকে নষ্ট করে দিয়েও তার মধ্যে কিছুমাত্র প্রতিক্রিয়া হয় না। পৃথিবীতে সেসব হৃদয় অসাড়, অনুভূতিহীন; হিসাবের দিন নিজের বোঝার নিচে পিষ্ট হবে এই হৃদয়গুলো।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহভীরু মানুষরা কখনো কোনো কিছুকে ভয় করে না। এমনকি প্রাণঘাতী শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে আল্লাহু আকবার আওয়াজ তোলার মাধ্যমে। মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের অন্তরে অনবরত শক্তি ও সাহস জোগান। তাই তাঁরা সতত সামনে এগিয়ে চলে আশায় বুক বেঁধে।
মুমিনরা কখনো হতাশ হয় না। হাজারো বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও অনবরত অগ্রসর হয় সামনের দিকে। মুত্তাকিদের চলার পথে প্রধান পাথেয় হলো দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়া ও অসীম অনুগ্রহ। এ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক। এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘(আরো স্মরণ করো) যখন তোমরা তোমাদের মালিকের কাছে (কাতর কণ্ঠে) ফরিয়াদ পেশ করছিলে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ফরিয়াদ কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের (এ যুদ্ধের ময়দানে) পর পর এক হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করব।’ (সূরা আল-আনফাল-৯)
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে মুমিন-মুজাহিদরা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ করে। সঙ্কট-সংগ্রামে রাহমানির রাহিমের রহমতের ছায়া তাদের অন্তরে প্রশান্তি দান করে। আসমানি ওহির জ্যোতির্ময় আলো তাদের অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করে। তারা উপলব্ধি করতে পারে সব শক্তি ও ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ জাল্লা শানুহু।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘(হে নবী), তুমি বলো, হে রাজাধিরাজ (মহান আল্লাহ), তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সাম্রাজ্য দান করো, আবার যার কাছ থেকে চাও তা কেড়েও নিয়ে যাও, যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত করো; সব রকমের কল্যাণ তো তোমার হাতেই নিবদ্ধ; নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।’
তুমিই রাতকে দিনের মধ্যে শামিল করো, আবার দিনকে রাতের ভেতর শামিল করো; প্রাণহীন (বস্তু) থেকে তুমি (যেমন) প্রাণের আবির্ভাব ঘটাও, (আবার) প্রাণহীন (অসাড়) বস্তু বের করে আনো প্রাণসর্বস্ব (জীব) থেকে এবং যাকে ইচ্ছা তুমি বিনা হিসাবে রিজিক দান করো।’ (সূরা আলে-ইমরান : ২৬-২৭)
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তাদের আমলের ব্যাপারে যেমন বলেছেন তেমনি পরস্পর সম্পর্কের নমুনাও তুলে ধরেছেন আয়াতে কারিমায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; অন্য যেসব লোক তার সাথে আছে তারা (নীতির প্রশ্নে) কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, (আবার তারা) নিজেদের মধ্যে একান্ত সহানুভূতিশীল, তুমি (যখনই) তাদের দেখবে, (দেখবে) তারা রুকু ও সিজদাবনত অবস্থায় রয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করছে, তাদের (বাহ্যিক) চেহারায়ও (এ আনুগত্য ও) সিজদার চিহ্ন রয়েছে; তাদের উদাহরণ যেমন (বর্ণিত রয়েছে) তাওরাতে, (তেমনি) তাদের উদাহরণ রয়েছে ইঞ্জিলেও, (আর তা হচ্ছে) যেমন একটি বীজ যা থেকে বেরিয়ে আসে একটি (ছোট্ট) কিশলয়, এরপর তা শক্ত ও মোটাতাজা হয় এবং (পরে) স্বীয় কা-ের ওপর তা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যায়, (চারাগাছটির এ অবস্থা তখন) চাষির মনকে খুশিতে উৎফুল্ল করে তোলে, (এভাবে একটি মুমিন সম্প্রদায়ের পরিশীলনের ঘটনা দ্বারা) আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের মনে (হিংসা ও) জ্বালা সৃষ্টি করেন; (আবার) এদের মধ্যে যারা (আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য তাঁর ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ (সূরা আল-ফাতাহ-২৯)। লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com