মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তিস্তা মেগাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলনের বিশাল পদযাত্রা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলায় হেফাজত ইসলামের কাউন্সিল গুণিজন সমাবেশ শাহজাদপুরে জ্বিন হাজির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশের সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রক্ষায় নাগরিক সচেতনা সেমিনার নগরকান্দায় বার্ষিক ক্রীড়া ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন তাড়াশে ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় সেড নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন সদরপুরে ২ মণ জাটকা ইলিশ জব্দ: মৎস ব্যবসায়ীকে জরিমানা কালিয়ায় ৩ দিন ব্যাপী ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন

সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফের ইন্তেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন মোহাম্মদ আব্দুর রউফ (৯২) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফের বাবা এবং বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। মোহাম্মদ আব্দুর রউফ দীর্ঘ দিন যাবৎ হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি ও বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
গতকাল রোববার আসরের নামাজের পর মহাখালী গাউসুল আযম মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম এবং সোমবার জোহরের নামাজের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। পরে সোমবার ময়মনসিংহের সদর থানার দাপুনিয়া হাইস্কুল মাঠে মাগরিবের নামাজের পর তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে দাফন করা হবে।
তিনি ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের পঞ্চম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবেও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি পেয়ে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন, আনন্দ মোহন কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি ডিগ্রি, সরকারি বৃত্তি নিয়ে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ও এমএ, ইন এডুকেশন ডিগ্রি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আবদুর রউফ ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে তদানীন্তন ঢাকা হাইকোর্টে আইন-ব্যবসায় নিয়োজিত হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে থাকাকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাকে ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন, তিনি বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের স্থলে স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনের পদ ত্যাগ করেন ও বিচারপতি এ কে এম সাদেক তার স্থলে স্থলাভিষিক্ত হন। পরে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন ও জুন ১৯৯৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ হামদর্দ (ওয়াক্ফ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসঙ্ঘ মিশনে অংশ নিয়ে বিদেশেও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আইন উপদেষ্টার শোক
সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের শোক
বিচারপতি আব্দুর রউফের মৃত্যুতে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের একান্ত সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো: রুহুল আমীন সরদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির শোক
মোহাম্মদ আবদুর রউফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির (বিসিএ) সভাপতি আবেদুর রহমান ও সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী। বিবৃতিতে তারা মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যধারণের তৌফিক কামনা করে বলেন, মোহাম্মদ আবদুর রউফ ছিলেন দেশ মানবতার নিবেদিত প্রাণ। তিনি ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।
সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন মোহাম্মদ আব্দুর রউফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রোববার এক শোক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে বিচারপতি রউফের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশর গণতান্ত্রিক পথচলার ক্ষেতে বিচারপতি রউফ বার বার উদাহরণ হয়ে আসবেন। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।’
ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘বিচারপতি রউফ ছিলেন নাগরিক সমাজের একজন বড় স্তম্ভ। ভোটাধিকার, সংস্কার এবং গণতন্ত্রের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিচারপতি আবদুর রউফের ইন্তেকালে জামায়াত আমিরের শোক
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গতকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক শোকবাণীতে জামায়াত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রউফ রাজধানী ঢাকার মগবাজারস্থ ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ হৃদযন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।’ ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, ‘বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রউফ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আইন ও আদালত অঙ্গনে তার দীর্ঘ আইনগত পেশা জীবনে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধের যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা একেবারেই বিরল। আমার জানা মতে, সত্যিকারের মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনো কারো সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির পরোয়া করেননি। অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে আইনি সহযোগিতা প্রদান করেছেন। মজলুমানের পক্ষে তার এ লড়াই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মজলুমদের পক্ষ থেকে আমি তাকে গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ১৯৯১ সালে জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন; যে নির্বাচন দেশ-বিদেশে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। তার নিরপেক্ষতা, সততা ও যোগ্যতা ছিলো প্রশ্নাতীত। দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিজমের পর বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে তার মতো একজন প্রতিভাবান অভিভাবকের বড় প্রয়োজন ছিল। তার ইন্তেকালে জাতি একজন অত্যন্ত আদর্শবান, দেশপ্রেমিক, উদার গণতন্ত্রমনা, আইন বিশেষজ্ঞ, ন্যায় বিচারক ও একজন ইসলামী ব্যক্তিত্বকে হারাল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সকল ভুলত্রুটি মাফ করে দিন, তার নেক আমলসমূহ কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার শোকাহত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ তাদের এ বিরাট শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com