বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখী চাষ প্রকল্প

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে মেহেরপুরের আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার সূর্যমুখী চাষ প্রকল্প হাতে নিয়ে ছয় বছর ধরে চাষ করছে। দেশে এ চাষ ছড়িয়ে দিতে অনেকটা সফল হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবছর কোটি টাকার বীজ উৎপাদন হচ্ছে। বীজ উৎপাদন খামারটিতে সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে চাষের জন্য বীজ উৎপাদন হচ্ছে। বার্ষিক উৎপাদিত বীজের মূল্য কোটি টাকা। দেশে ছড়িয়ে দিতে ষষ্ঠবারের মতো বীজের জন্য সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে মেহেরপুরের আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারের নিজস্ব ২১ বিঘা জমিতে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে খামারের জমি।

সেখানে প্রতিদিন কম করে হলেও দুই থেকে আড়ায় হাজার নারী পুরুষ ভিড় করছে ফুলের বাগানে ছবি তুলতে।
ওই বাগানে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেলফি তোলার। বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ টিকটক কন্টেন্ট নির্মাণে ব্যস্ত। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলার মানুষ ছুটে আসছে সূর্যমুখীর ফুলের বাগানে। আসছে বিভিন্ন বয়সের অগণিত নারী-পুরুষ । সরকারি কর্মকর্তারাও পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন অবসরে। সকলেরই উদ্দেশ্য ফুলের বাগানে নিজেকে ধরে রাখতে ছবি তুলতে। কেউ যেন ফুল না ছেড়ে সেজন্য সেখানে অতিরিক্ত লোকবলও নিয়োগ করতে হয়েছে খামার কর্তৃপক্ষকে। এখন বীজ খামারে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কিত খামারের কর্মকর্তারা। কারণ ফুলেই পাওয়া যায় বীজ। আর সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে কেউবা সেলফি, কেউবা স্বজন নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে নষ্ট করছে ফুল।
গাংনী উপজেলার বামুন্দি থেকে এসেছেন গৃহবধূ নিলাঞ্জনা, ভগ্নিপতি সুধির সরকার ও তার স্ত্রী নিলিমা। নিলিমা বলেন- গ্রামের অনেকেই এসেছেন এখানে। তাদের কাছে ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে এসেছি। কারণ মেহেরপুরে এমন পরিবেশ কোথাও নেই। চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছেন মাসুমা আক্তার ও স্বামী আমজাদ হোসেন। তারা জানান, মাঠজুড়ে মনোমুগ্ধকর এমন সূর্যমুখী ফুল কখনো দেখিনি। এখানে তোলা ছবি জীবনের পড়ন্ত বয়সে এসব দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে। খামারের কেয়ারটেকার আমিরুল ইসলাম জানান, ফুল ফোটার পর ফেসবুকে ভাইরাল হলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কাউকে আটকানো যাচ্ছে না। খামারের মূল গেটে তালা লাগানোর পর প্রাচীর টপকে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে গেট খুলে দিয়ে লাঠি হাতে জমির মধ্যে আসা প্রতিরোধ করতে হচ্ছে। নাহলে গাছের সাথে ছবি তুলতে অনেকেই বাগানের মাঝখানে চলে আসছে। তাতে অনেক গাছ ভেঙ্গে পড়ছে।
তিনি আরও জানান, এগুলো এক ধরনের বর্ষজীবী সূর্যমুখী। ওই সূর্যমুখীর ফুল দেখতে সূর্যের মতো বলে এর নাম সূর্যমুখী। ফুলের পাপড়ি দেখতে বাগানে আসে বিভিন্ন পাখি। ওড়াউড়ি করছে বাগানময়। গত পাঁচ বছর ধরে খামারে বীজের জন্য সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। মেহেরপুর শহরের মল্লিক পাড়া থেকে আসা রানি আক্তার নামের এক দর্শনার্থী জানান, সুযোগ পেলেই পরিবার নিয়ে ছুটে আসেন। সূর্যমুখীর বাগান ও সারি সারি নারকেল গাছ বেশ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ প্রকৃতির মাঝে পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগে।
পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা কলেজ শিক্ষার্থী, রনি, সবুজ, আয়শা ও রাজনও এসেছিল সূর্যমুখীর বাগান দেখতে। এদের মধ্যে আয়শা খাতুন বলেন, ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখেছিলাম এ সূর্যমুখী বাগানের। তাই নিজ চোখে দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসলাম। পুরো জায়গাটাই সুন্দর, দেখার মত।
খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, গত কয়েক বছর ধরে খামারে সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদন করা হয়। দেশে ব্যাপকহারে সূর্যমুখীর চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এবার ২ টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে আবাদ করা হলেও যখন ফুল ফোটে তখন দর্শনার্থীরা ভিড় করে। ফুলের পুরো সময়টি আমাদের খামারটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠে। দর্শনার্থীরা যাতে ফুলের ক্ষতি না করে তার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। সাত একর জমিতে অন্তত কোটি টাকার বীজ উৎপাদন হবে বলেও এ কর্মকর্তা জানান। সূর্যমুখী একটি তেল জাতীয় ফসল। সূর্যমুখী চাষ হলে দেশের ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ হবে। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ব্যক্তি উদ্যোগে ৪৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছে কৃষকেরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com