বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

কালীগঞ্জে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

উপকারভোগী ৭ জন দুস্থ পরিবারের কাছে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) এর চাল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তা নিজেই আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন বিএনপির এক নেতা। পরে এলাকায় তা জানাজানি হয়ে গেলে পিঠ বাঁচাতে ভুক্তভোগী কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে সেই চাল দিয়ে আসেন নিজেই। এখনো কয়েকজন চাল পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ গাজীপুর কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়ার বাঙ্গালগাঁও এলাকার আলী নেওয়াজ ফকিরের ছেলে। সে জাঙ্গালিয়া ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, গত সোমবার উপজেলার জাঙ্গালিয়ায় ৮৬৪ জন দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে সরকার নির্ধারিত ভিজিএফ এর(ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ওই চালের কার্ড আগেই বিতরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে জাঙ্গালিয়া ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ৭ জন উপকারভোগীর নামের তালিকায় তার নামে স্বাক্ষর করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ কেজি করে মোট ৭০ কেজি চাল তুলে নিয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদ কে জানান তিনি ওই ৭ জন উপকারভোগীর বাড়িতে সেই চাল পৌঁছে দেবেন। এক সপ্তাহ পর গ্রাম পুলিশ আনোয়ার মোল্লা তার ওয়ার্ডে চাল বিতরণের অবস্থার খোঁজ নিতে গেলে তিনি জানতে পারেন হারুন অর রশিদ যাদের নামে চাল তুলে নিয়ে গেছেন তারা কেউ চাল পায়নি। বিষয়টা নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা শুরু হলে হারুন অর রশিদ আট দিন পর কয়েকজনের বাড়িতে সেই চাল পৌঁছে দিলেও এখনো কয়েকজন চাল পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী আলামিন ফকির বলেন, আমি বিএনপি’র একজন সক্রিয় কর্মী। দলে আমার কোন পদ পদবী না থাকলেও এলাকাতে সবাই জানে আমি বিএনপির জন্য কি করেছি। গত কিছুদিন আগে ভিজিএফ এর চালের আশায় আমি আমার নাম ইউনিয়ন পরিষদে জানালে সেখান থেকে একটি কার্ড আমাকে দেয়া হয়। গত দুইদিন আগে জানতে পারি সেই কার্ডের বিনিময়ে ইতিমধ্যে চাল বিতরণ হয়ে গেছে, কিন্তু আমি কোন চাল পাইনি। খবর নিয়ে জানতে পারি আমাদের ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ আমার নামে চাল উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে আমার বাড়িতে সেই চাল পৌঁছে দেয়নি। যদি জানাজানি না হতো তাহলে এটা নিশ্চিত সে ওই চাল মেরে দিত। অপর ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম জানান, যেদিন জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ হয় সেই দিন তার মেয়ের শরীরে অস্ত্র পাচার হয়। যে কারণে তিনি চাল আনতে যেতে পারেননি। গত পরশুদিন জানতে পারেন তার নামে বিএনপির এক নেতা চাল উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনি ভেবেছিলেন পরের দিন ইউনিয়ন পরিষদে যাবেন চাল আনার জন্য। কিন্তু গতকাল সকালে হারুন ওর রশিদ নিজেই ১০ কেজি চাল তার বাড়িতে দিয়ে আসেন। এক সপ্তাহ পর চাল পেয়ে তিনি খুশি হলেও আশঙ্কা করেন যদি এলাকায় জানাজানি না হতো তাহলে হয়তো তার জন্য বরাদ্দকৃত চাল হয়তো বিএনপির ওই নেতা নিজেই আত্মসাৎ করতেন। জাঙ্গালিয়া ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি, মীর আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে বিজিএফ’র ২৮ টি কার্ড বিতরণের সুযোগ পাই। কার্ডগুলো আমি হাতে পাওয়ার সাথে সাথে আমার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিলিয়ে দেই যেন তারা আমার কাজকে সহজ করতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় হারুন অর রশিদকে ৯ টি কার্ড দেই। তার কাছে দেয়া কার্ডের ভিত্তিতে ২ জন এসে সরাসরি চাল নিয়ে যায়। বাকি ৭জনের চাল সে নিজে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে পরিশোধ থেকে নিয়ে গেছে বলে জানতে পারি। কিভাবে সেগুলো নিয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, বিষয়টি আমার কানে এসেছে, আমি অভিযুক্ত হারুন অর রশিদকে ডেকে নিয়ে আসি। সে তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। ভবিষ্যতে আর এমন কাজ করবে না বলে অঙ্গীকারও করেছে। জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ দিনের মত হয় এই ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করেছি। ভিজিএফ এর চাল এই পরিষদে কিভাবে বিতরণ করা হয় তা আমি পরিষদের সকল সদস্যকে জিজ্ঞেস করে তাদের হাতেই দায়িত্ব দিয়ে দেই। আমি চেষ্টা করেছি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, বিষয়টি এইমাত্র আমি আপনার থেকে জানতে পারলাম। যেহেতু আপনি জানিয়েছেন আমি এখনই পরিপূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com