বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ন

নতুন বছরের শুরুতেই ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে চমক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কমেছিল। তবে নতুন বছরের শুরুতেই ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখা গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই বাজার থেকে।
২০২৪ সালের নয় মাস ২.০৬ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি ছিল। আর্থৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে ২.০৬ শতাংশ কম আয় করেছিলেন। এতে রপ্তানিকারকরা চিন্তিত ছিল। তবে বছরের শেষ তিন মাসে রপ্তানি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। ২০২৪ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে মোট ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ১২ লাখ (১৯.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরে ২০২৩ সালে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৫৭ লাখ (১৮.৮৫ বিলিয়ন) ডলার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিসের (ইউরোস্ট্যাট) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ইউরোপের বাজারে, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫২.৫৬ শতাংশ বেশি। এর আগে কখনই এত প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই বাজারে ১.২৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ইইউর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ৮৫৭ কোটি ৬৫ লাখ (৮.৫৭ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫.১২ শতাংশ বেশি। ইইউতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীন সবার শীর্ষে। তৃতীয় তুরস্ক।
জানুয়ারিতে চীন ইউরোপের বাজারে ২৪৫ কোটি ৯১ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩.৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চীনের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১.৮৪ বিলিয়ন ডলার।
তবে এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি সামান্য কমেছে; ০.০৩ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক বা নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জানুয়ারিতে তুরস্ক ইউরোপে ৯০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৯০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার।
ইউরোপে রপ্তানিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। জানুয়ারিতে ভারত ইউরোপের বাজারে ৪১ কোটি ১৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ শতাংশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ই অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে; উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকা-।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও ২০২৫ সালটা ভালোই শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অস্থিরতা-অনিশ্চতা না থাকলে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়ত।”
হাতেম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় বাজারটি নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগ যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমাদের রপ্তানি ২৫ শতাংশ বাড়বে।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে কিছু অর্ডার পাচ্ছিও। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। বিনিয়োগের সেই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। আমাদের এখন এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে হবে। আর এ জন্য সরকার ও পোশাক শিল্পমালিক ও রপ্তানিকারকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জরুরি সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নিতে হবে। কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলে চলবে না।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে র‍্যাপিড। বর্তমান অবস্থায়ও ইইউতে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে র‍্যাপিড।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মতো আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশ থেকে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল।
সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ছিল ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
সুসংবাদ হচ্ছে নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৫ সাল শুরু হয়েছে উল্লম্ফন দিয়ে। এই বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল দেশটিতে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com