রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

মানুষের বিবেক আসলে কী?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫

‘বিবেক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি মূল ল্যাটিন পড়হংপরবহঃরধ থেকে। যার অর্থ ‘জ্ঞানসহ’ বা ‘জ্ঞানের গোপনীয়তা’। এটি কেবল একটি মানবিক গুণ নয় বরং মানুষের নৈতিকতা ও সঠিক-ভুলের বোধ নির্ধারণে এক অনন্য দিশারি। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জন্মগতভাবে বিবেক বোধ কাজ করে। এ বিবেকই তাকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে শেখায়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ-সব বয়সের মানুষের মধ্যেই বিবেকের একটি প্রকাশ থাকে। বিশেষ করে কৈশোরে পৌঁছে মানুষ যখন আত্মচিন্তায় অভ্যস্ত হয়; তখন তার বিবেক আরও স্পষ্টভাবে কাজ করতে শুরু করে। বিবেকের কারণেই একজন মানুষ অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে। নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চাইতে পারে। কখনো নিজের সুবিধা ত্যাগ করে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বিবেক আজ অনেকের মাঝেই চাপা পড়ে যাচ্ছে লোভ, হিংসা, ক্ষমতার লালসা ও আত্মকেন্দ্রিকতার নিচে। সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত অমূল্য উপহারকে উপেক্ষা করে মানুষ যখন শুধু ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করে; তখনই সমাজে দেখা দেয় অনৈতিকতা, দুর্নীতি, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা। একজন মানুষ যখন নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করতে দ্বিধা করেন না; তখনই বোঝা যায়—তার বিবেক ঘুমিয়ে পড়েছে, হয়তো লোপ পেয়েছে।
বর্তমান সমাজে প্রায়ই দেখতে পাই—ক্ষমতাধররা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, শিক্ষিতরাও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, সাধারণ মানুষ মুখ বুজে সবকিছু মেনে নিচ্ছেন। কেউ যেন এসব দেখেও দেখছেন না। কারণ সবার আগে আছে নিজের পরিবার, নিজের স্বার্থ, নিজের নিরাপত্তা। কিন্তু এই ‘নিজের’ খোলস থেকে বের না হলে কোনো সমাজই টিকে থাকতে পারে না।
ঠিক এই প্রেক্ষাপটে বিবেককে জাগ্রত করার তাগিদ থেকেই জাতিসংঘ প্রতি বছর ৫ এপ্রিল ‘আন্তর্জাতিক বিবেক দিবস’ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দিনটি স্বীকৃতি পায়। এরপর ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো পালিত হয় আন্তর্জাতিক বিবেক দিবস।
দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো—মানুষকে তার অন্তর্নিহিত বিবেকের আহ্বানে সাড়া দিতে উৎসাহিত করা। বিশ্বজুড়ে যে নৈতিক অবক্ষয়, সহিংসতা, যুদ্ধ, জাতিগত সংঘাত, সামাজিক বৈষম্য এবং পরিবেশ ধ্বংসের মতো সংকট দেখা দিচ্ছে। তার পেছনে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের অভাব ও বিবেকের অচেতনতা।
যদি আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরে—পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এমনকি রাজনীতিতেও বিবেককে সক্রিয়ভাবে জাগ্রত রাখতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ আরও মানবিক, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। এই জাগরণ শুরু হতে পারে ছোট ছোট কাজ থেকে—একটি সত্য বলা, অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা কিংবা নিজের ভেতরের অন্ধকারকে স্বীকার করে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
বিবেক জাগ্রত করার এ চর্চা ব্যক্তি থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র থেকে বিশ্বে এক মহৎ পরিবর্তন আনতে পারে। আর সে কারণেই বিবেক দিবস শুধু একটি প্রতীকী দিন নয়—এটি একটি আহ্বান, এক ধ্বনিতে যাকে বলে—‘নিজের অন্তরকে জাগাও, মানবতার পথে চলো’।
আসুন, ৫ এপ্রিল শুধু একটি দিন হিসেবে নয় বরং একটি উপলক্ষ হিসেবে বিবেচনা করি। নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করার, জাগিয়ে তোলার এবং সমাজে নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার। কারণ পরিবর্তনের শুরুটা আমাদের ভেতর থেকেই হওয়া উচিত। তবেই সত্যিকারের বিবেক আমাদের মধ্যে জাগ্রত হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com