রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

ঝিনাইদহে বেড়েছে তামাক চাষ, দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫

বেশি লাভের আশায় দিন দিন ক্ষতিকর তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এই জেলার কৃষকরা। ফলে জেলার শত শত হেক্টর জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির প্রকৃতিও পরিবর্তন হচ্ছে। এবছর ফলন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
কৃষকরা জানান, এ বছর বিঘা প্রতি তামাক চাষের ব্যয় বাড়লেও, দাম বাড়েনি। ফলে লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও অনেক কৃষক কিছুই জানেন না।
সরেজমিনে জেলার হরিণাকু-ু, মহেশপুর, সদর উপজেলা ও শৈলকূপার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে বিস্তীর্ণ তামাকের ক্ষেত দেখা গেছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে মানুষ ও জমির জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষের রহস্য।
তামাক চাষি কৃষকরা জানান, অন্যান্য ফসল আবাদ করলে দাম পাওয়া যায়। কিন্তু ধান, গম, ভুট্টা বিক্রি করে একবারে অনেক টাকা পাওয়া যায় না। যে কারণে কৃষক তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। কারণ তামাক বিক্রির জন নির্ধারিত মার্কেট, দর ও ক্রেতা রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি নির্ধারিত মূল্যে তামাক ক্রয় করেন। ফলে কৃষক তামাক বিক্রি করে এককালীন টাকা পায়। এই এককালীন টাকার মোহে পড়ে কৃষকেরা দিনদিন ক্ষতিকর তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
হরিণাকু-ু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের তামাক চাষি আলী হোসেন বাসসকে বলেন, ৪ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। কিন্তু দাম কেমন পাওয়া যাবে, তা জানি না। কোম্পানিগুলো তামাক লাগানোর সময় এক রকম দামের কথা বলে। কিন্তু তামাক বিক্রির সময় সেই দাম আর পাওয়া যায় না।
একই গ্রামের তামাক চাষি আকিমুল হোসেন জানান, এবছর প্রতি বিঘা তামাক চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া তামাক শুকানোর জন্য কাঠ ক্রয় বাবদ খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার খরচ বাড়লেও দাম বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো।
জানা যায়, গত বছর তামাকের প্রতি কেজি মূল্য নির্ধারণ ছিল ২২৬ টাকা। গুণগত মান ভেদে তামাকের কয়েকটি গ্রেড হয়। গ্রেড অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে ভালো ‘এ’ গ্রেডের তামাকের প্রতি কেজি মূল্য এবছরও ২২৬ টাকা চলছে। ফলে দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি তামাক ক্রয় কোম্পানি গ্লোবাল টোবাকো লিমিটেডের সুপারভাইজার জাহিদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘কোয়ালিটি অনুযায়ী তামাকের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। এবছর তামাক পাতার কোয়ালিটি খুব একটা ভালো হয়নি। যে কারণে গত বছরের দরে এবারও তামাক কেনা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের নির্ধারিত কার্ড করে দিয়েছি। কার্ড ছাড়া কোনো চাষির পণ্য আমরা কিনি না। এতে করে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমেছে।’
সাবেক বিন্নি গ্রামের মো. মোনতাজ মন্ডল বলেন, ‘তামাক চাষ করে ভুল করেছি। জমির উর্বরতা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। যেই জমিতে একবার তামাক লাগানো হয়, সেই জমিতে অন্য ফসল ভালো হতে চায় না।
শ্রীফলতলা গ্রামের তামাক চাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় তামাক চাষ করেছি। কিন্তু এবছর জ্বালানি খরচ, শ্রমিক খরচ মিলিয়ে লাভের পরিমাণ খুব বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না। তামাক চাষ আর করব না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় মোট ২২৯ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। গত বছর জেলায় ১৯৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছিল কৃষক। সরকারি উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নেয়ার ফলে বেড়েছে তামাক চাষ।
জেলার সচেতন বাসিন্দারা মনে করেন, তামাক চাষ সীমিত করা জরুরি। তামাক চাষ করার কারণে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। জমির উর্বরতা কমে যায়। পরিবেশ-প্রকৃতির জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ তামাক। গ্রামের পরে গ্রামে কৃত্রিম উপায়ে আগুনের তাপে তামাক শুকানোর ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোয়া। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ী) উপ পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বাসসকে বলেন, ‘তামাক চাষ গত বছরের তুলনায় এবছর বেড়েছে। আমরা কৃষকদের কাছে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার দ্রুতই এ সংক্রান্ত কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে বলে জেনেছি। আশা করছি, আমরা আগামী বছর তামাক চাষ অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারব।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com