বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএনপি-জামায়াতসহ সকলকে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : মির্জা আব্বাস কুয়েট: চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে মানবে না শিক্ষক সমিতি চিফ প্রসিকিউটর সরকার দ্বিতীয় ট্র্যাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধা নটেকসই প্রত্যাবাসন: ড. ইউনূস কাশ্মীরে হামলা: ফের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আশঙ্কা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক যে কোনো মূল্যে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে: তারেক রহমান শেষ মুহূর্তের গোলে মার্টিনেজের ভিলাকে হারালো ম্যানসিটি দেশে তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম শৈশবেই রোপণ হোক মার্জিত আচরণের বীজ

ইতালিয়ান তরুণ নওমুসলিম লুকাস ক্লেমেন্ট

ইসলাম ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক যুগ ধরে কাজ করছেন লুকাস ক্লেমেন্টে। দীর্ঘ এই সময়ে কথা হয় এক মুসলিম সহকর্মীর সঙ্গে। তার কথায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ও অন্য ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন লুকাস। পরে ৩৫ বছর বয়সে দীর্ঘদিন চিন্তা-ভাবনার পর অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইতালির মিলানে জন্ম নেওয়া ক্লেমেন্টে প্রথমে বারটেন্ডিং হিসেবে ব্রাসেলসে যান। মূলত তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে অফারটি পেয়েছিলেন। তখন ব্রাসেলস সম্পর্কে তার কোনো জানাশোনা ছিল না। এমনকি ফ্রেঞ্চ ভাষাও তার জানা ছিল না।
ভিনদেশে একজন সাধারণ অভিবাসী যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকে তিনিও এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
ক্লিমেন্টে জানান, তিনি যে হোটেলে থাকতেন সেখানে মরক্কোর একজন রিসেপশনিস্টের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মূলত ওই ব্যক্তি সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক সময় তার আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়। তাদের মধ্যে প্রায়ই ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতো।
ক্লেমেন্টে ওই সময় একজন নাস্তিক ছিলেন। খ্রিস্টান স্কুলে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তা ছাড়া তার পরিবারও খুব ধার্মিক ছিল না।
ক্লিমেন্টে বলেন, ‘আমি স্রষ্টায় বিশ্বাস করতাম না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে আমরা বিতর্ক করতাম।
আমি পড়াশোনা ও গবেষণা করে কিছু বিষয় যুক্তি বের করি, কেন আমি মনে করি স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। পরে এসব যুক্তি উপস্থাপন করতাম। তবে আমি দ্রুত বুঝতে পারি, আমার এসব প্রমাণ দুর্বল। বরং তার যুক্তিগুলো খুবই শক্তিশালী। তখন আমি বুঝতে শুরু করি, স্রষ্টার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। আমার মতো একজন নাস্তিকের জন্য তা খুবই অবিশ্বাস্য ছিল। এরপর আমি গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করার পর ক্লেমেন্ট কোন ধর্ম সবচেয়ে সঠিক সেই প্রশ্নের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। ইসলাম সম্পর্কে জানার পর কোরআনের অনস্বীকার্য প্রমাণ এবং অলৌকিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার খোঁজ পান যা তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি।
ক্লেমেন্ট বলেন, ‘কোরআনের প্রথম যে বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হলো এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এমনকি তাতে ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে।’
ক্লেমেন্ট বলেন, কেবল বৈজ্ঞানিক দিকগুলোই তাকে প্রভাবিত করেনি, বরং মুসলিম সমাজের চরিত্রও তাকে প্রভাবিত করেছে। মুসলিমরা সাধারণত বেশি উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল। ইসলাম সামাজিক আচরণকে যেভাবে প্রভাবিত করে তিনি এর প্রশংসা করেন।
তা ছাড়া একজন ইমামের কথাও ক্লেমেন্টের মধ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। ইমাম তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি কি মনে করো, তোমার কবজির ঘড়িটি কোনো স্রষ্টা ছাড়াই অস্তিত্বে এসেছে? সে বলেছিল, না। তখন ইমাম বলেছিল, তাহলে তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে একজন মানুষ একজন স্রষ্টা ছাড়া অস্তিত্বে এসেছে?’ ক্লেমেন্ট এই প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করে বুঝতে পারেন, একটি উচ্চতর শক্তির অস্তিত্ব কাকতালীয় বিষয় নয়।
ক্লেমেন্ট বলেন, ‘যখন আমি মুসলিম হই তখন আমি আমার হৃদয়ে এমন কিছু অনুভব করি। তা এমন কিছু যা আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। কেবল অনুভব করতে পারবেন। আপনি সুন্দর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি অনুভব করেন। তা একটি অবর্ণনীয় অনুভূতি, কিন্তু তা বাস্তবতার সারাংশ।’
ইসলাম গ্রহণের পর তার আধ্যাত্মিক রূপান্তরের বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্লেমেন্ট বলেন, ‘প্রথমে আমি সন্দেহের মন নিয়ে ইসলামের দিকে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা একটি আধ্যাত্মিক জাগরণে পরিণত হয়। আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম প্রয়োগ করতে শুরু করেন। নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে থাকেন। আমি পার্থক্য অনুভব করতে শুরু করেন। যেদিন আমি মুসলিম হয়েছিলাম, সেদিনই আমি আমার হৃদয়ে কিছু অনুভব করেছিলাম। এটি ছিল গভীর শান্তির অনুভূতি।’
তা ছাড়া ক্লেমেন্ট একটি স্বপ্নের কথাও বর্ণনা করেন। তিনি দেখেন, একজন নাস্তিক বন্ধুর সঙ্গে তিনি দৌড়াচ্ছিলেন। পথের সব বাধা অতিক্রম করে তিন স্বপ্নে দৌড়ে জয়ী হন। তিনি বলেন, ‘তা আমার কাছে একটি পূর্বাভাস ছিল, আমি সঠিক পথে আছি।’
ইসলাম গ্রহণের পর ক্লেমেন্টের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। তিনি বলেন, ‘আগে আমি টাকা হারানোর ভয় করতাম। আমি ঝুঁকি নিতে পারতাম না।ভয় করতাম যে আমি যা বিনিয়োগ করেছি তা হারাব। কিন্তু বিশ্বাস গ্রহণের পর আমি নৈতিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে বুঝতে পারি, সবকিছুই আল্লাহর কাছ থেকে আসে। একবার আপনি তা বুঝতে পারলে ভয় অদৃশ্য হয়ে যায়।’
ক্লেমেন্ট আরো বলেন, ‘আমি আমার সব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করেছি। আমি মদ্যপান ও ধূমপান বন্ধ করেছি। আমার মনোযোগ উন্নত হয়েছে। আমি বুঝতে পারি, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারতাম না। ৩৫ বছর বয়সে আমি আমার ক্যারিয়ার এবং পরিবার গড়ে তুলেছি। অন্যদিকে ইতালিতে আমার সমবয়সী বন্ধুরা এখনও তাদের বিশের কোঠায় বসবাস করছে।’ আধ্যাত্মিক সংকটে ভোগা তরুণদের উদ্দেশে ক্লেমেন্ট বলেন, ‘ইসলাম হলো আপনার সব সমস্যার সমাধান। তা একটি উন্নত জীবনের দিকে পরিচালিত করে। ইসলামের অভ্যন্তরীণ দিক ব্যাখ্যা করা কঠিন, তবে যৌক্তিক দিকগুলো স্পষ্ট। ইসলাম অনুসারে জীবনযাপন আপনাকে শক্তি, মনোযোগ ও উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে নেবে।’ তথ্য সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com