শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে হুমকিতে রয়েছে সেতু, বাড়িঘরসহ ফসলি জমি। সরকারি ইজারার সুযোগ নিয়ে বালু ব্যবসায়ীরা দিন-রাত সমানতালে নির্দিষ্ট বালু মহালের দেওয়া অংশের বাইরেও বালু তুলছেন। ফলে অবৈধভাবে ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনে একদিকে যেমন নদী তার সৌন্দর্য হারিয়ে গতিপথ বদলাচ্ছে। অন্যদিকে দুপাড় ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি ও বসতভিটা। হুমকিতে রয়েছে কোটি টাকা ব্যায়ে সেতুসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া রাতের বেলায় ড্রেজার মেশিনের বিকট শব্দে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে বারবার অভিযান চালিয়েও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও সিলেটে যেতে হলে ভোগাই নদী পার হতে হয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে ওই নদীর ওপর ২০১১ সালে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশ বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভোগাই নদীর নিষিদ্ধ স্থান থেকে অবৈধভাবে তুলে যাচ্ছে বালু। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চারআলী সেতু। স্থানীয়রা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগাড় এলাকায় ভোগাই নদীর চারআলী সেতু সংলগ্ন নিষিদ্ধ স্থানে ড্রেজার বসিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে প্রতিদিন ১০-১৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
এতে নদীতে বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে সেতুর গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে পিলারের রড বেরিয়ে এসেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বালু তোলায় সেতুর পাশের ব্লকও ভেঙে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু সংলগ্ন স্থান থেকে বালু তোলা বন্ধ না হলে বড় ক্ষতির শঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে শ্রীবরদির সোমেস্বরী নদী থেকেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। যেখানে উপজেলার মেঘাদল, হাড়িয়াকোনা ও কর্নজোড়া গ্রাম থেকে প্রতি রাতে শত শত ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে বালু। পাশাপাশি ঝিনাইগাতি উপজেলার মহারশী নদী থেকেও অবৈধভাবে উত্তোলিত হচ্ছে বালু। ফলে উপজেলার গান্ধিগাঁও, গোমড়া, নলকুড়া, হলদিগ্রাম ও কাংসা এলাকায় দেখা গিয়ে তীব্র নদী ভাঙ্গন। নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগাড় এলাকার স্থানীয় জুলহাস মিয়া বলেন, এই চারআলী সেতু দিয়ে আমরা প্রতিদিন চলাফেরা করি। এছাড়া শেরপুর অন্যতম স্থলবন্দর নাঁকুগাও যেতে হলে এই সেতু আমাদের ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সেতুর চারপাশ থেকে যদি এভাবে বালু তোলা হয়, তাহলে সেতু কীভাবে টিকে থাকবে? যদি সেতুটি ভেঙ্গে যায় বা কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমরা চলাচল করব কিভাবে। আমরা চাই, সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা বন্ধ হোক। ঝিনাইগাতি উপজেলার গোমড়া গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, নদীর দুই পাশে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তাই নদীর তীরবর্তী স্থানগুলোতে মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। ফলে প্রায় প্রতিদিন দুপাড় ভেঙ্গে নদীতে পড়ছে, সাথে যাচ্ছে ফসলি জমির মাটিও। এভাবে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আমাদের সব আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাবে। শ্রীবরদি উপজেলার কর্ণজোড়া গ্রামের স্কুল ছাত্র আকাশ আহম্মেদ জানান, আমাদের গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালু নিয়ে প্রতিদিন অনেক ট্রাক যাতায়াত করে। এসব ট্রাক যাতায়াতের সময় রাস্তায় অনেক ধূলাবালি উড়ে।
এছাড়া এসব ট্রাকের কারণে আমাদের স্কুলে যেতে ভয় লাগে। এছাড়া দিনের বেলায় ড্রেজার মেশিন কম চললেও রাতের বেলায় বিকট শব্দে পড়তে ও ঘুমাতে পারি না। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ৩ মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ বালু খেকোদের বিরুদ্ধে ৩২ টি ভ্রাম্যমান আদালতে ৪২ জনকে অর্থদন্ড, ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডসহ ৩৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। এবিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে শেরপুরের সবক’টি নদী ভেঙ্গে যাচ্ছে নদীর পাড়, নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও ঠেকানো যাচ্ছেনা দূর্বৃত্তদের। স্থানীয় সকলের সহযোগীতায় যে কোনো মূল্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বদ্ধ পরিকর প্রশাসন।
কোলাবোরেশান ল্যাব প্রকল্পের আওতায় এবং সহায়তায়, (সাংবাদিক), নাম: জাহিদুল খান সৌরভ, পদবি: শেরপুর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক খবরপত্র, এখানে কাজ করে উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করছি।