সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ৫ দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতের ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করায় আ’লীগের জন্য যে দুঃসংবাদ দিলেন পিনাকী শহীদ জাহাঙ্গীরের স্মৃতি বুকে নিয়ে দিন কাটে মেয়ে সিনথিয়ার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো দিন:চিফ প্রসিকিউটর সুগন্ধীর উৎস আগর গাছ চাষ করে সফল বন বিভাগ আ.লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে আলাউদ্দিন জিহাদির মিথ্যা বক্তব্য ছড়াচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিদেশি ঋণ নিতে হলে পরামর্শকের বোঝা বইতেই হবে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে ভারতের লাভ না ক্ষতি?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে গত ৮ এপ্রিল অনেকটা হুট করে দুই দেশের মধ্যকার ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ভারত। এর ফলে ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যখন বিদেশি বিনিয়োগ টানতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে, তখন প্রতিবেশী দেশের এমন একতরফা পদক্ষেপকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
ট্রান্সশিপমেন্ট হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি দেশ তার পণ্য সরাসরি গন্তব্য দেশে না পাঠিয়ে মাঝপথে অন্য একটি দেশের বন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে রপ্তানি করে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য আমদানিও করা হয়।
২০২০ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি হয়। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল একতরফাভাবে সেই চুক্তি বাতিল করে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)।
কতটা ক্ষতি হবে বাংলাদেশের?
প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এতে বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না।
বিশ্লেষকেরাও বলছেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, বাংলাদেশ এই সুবিধা খুব বেশি ব্যবহার করতো না।
তাছাড়া, বাংলাদেশ ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানেই বেশি পণ্য রপ্তানি করে। ভারত বলেছে, এই দুই দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রভাব পড়বে না।
মূলত, ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাকসহ ‘সামান্য কিছু পণ্য’ রপ্তানি করতো বাংলাদেশ। এখন সেই সুবিধাটুকুই বন্ধ হয়ে যাবে।
ভারত সরকারের ২০২৩ সালের এক হিসাব বলছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার কেজির মতো বাংলাদেশি পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি হয়েছিল।
চুক্তি বাতিলে ভারতের লাভ না ক্ষতি?
বন্দরে জট কমানো এবং নিজেদের রপ্তানি আরও দ্রুততর করার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে স্বল্পমেয়াদে কিছুটা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তই হবে ভারত।
বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা থেকে ভারত প্রতি বছর যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করতো, এখন সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। ক্ষতি হবে লজিস্টিক ব্যবসায়ীদেরও। ব্যবসা কমে যাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, এমনকি এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু লোক চাকরিও হারাতে পারেন।
এমনিতেই বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে মহাসংকটে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি। এর মধ্যে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে কেবল পেট্রাপোল স্থলবন্দরেই ৪০ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জাগোনিউজকে জানান, পেট্রাপোলে প্রতিদিন যদি ২০০ গাড়ি আসতো, তার ৪০ শতাংশ থাকতো এই ধরনের পণ্যের, অর্থাৎ ট্রান্সশিপমেন্টের গাড়ি। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এখন তারা ৪০ শতাংশ কাজ হারাবে। ট্রান্সশিপমেন্টে যেসব ট্রাক বা ট্রেলার যুক্ত ছিল, তারা কাজ হারাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো যারা বন্দর পর্যন্ত এই পণ্যগুলো পৌঁছে দিতো, তারাও কাজ হারাবে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিলে ভারতের ওপর শুধু অর্থনৈতিক প্রভাবই পড়বে না, এর ভূরাজনৈতিক প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এটি বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারত সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশ এখন পণ্য রপ্তানির জন্য অন্য দেশ, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া, প্রতিবেশীর সঙ্গে এমন ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার কারণ হতে পারে, যা ভারতের বৈশ্বিক ইমেজের ক্ষতি করতে পারে।
কী বলছে ভারত?
ভারত সরকার বলছে, রাজনৈতিক কোনো কারণে নয়, বরং নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আমাদের বিমানবন্দর এবং অন্য বন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জট তৈরি হয়েছিল। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল, বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিল। সেজন্য ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহার করে বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানে আগের মতোই পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রণধীর জয়সওয়াল।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে ভারতের লজিস্টিক সমস্যা কমাতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, এবং আঞ্চলিক ক্ষতি সাধন করবে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা এবং চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া, রয়টার্স




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com