সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাজ্জাদ ইসলাম সবুজ(২৬) ও সুমাইয়া আক্তার তৃষার(২৬) পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। আর সেটি তৃষার কথিত স্বামী রোকনুজ্জামান পলাশ জেনে যান। সবুজের বিরুদ্ধে তৃষা ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ তোলার পর পলাশ ও তৃষা মিলে সবুজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কৌশলে সবুজকে ডেকে নিয়ে এসে হত্যার পর লাশ ৯ টুকরো করে কার্টনে ভরে কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ফেলে দেওয়া হয়। রাজধানীর উত্তরার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরত-ই-খুদা। এসপি মো. কুদরত-ই-খুদা জানান, সাভারের হেমায়েতপুরের মো. ইউসুফ আলীর ছেলে সাজ্জাদ ইসলাম সবুজ ৩ এপ্রিল ভোরে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হন। পরবর্তী সময় তাঁর পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এবং মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় ভিকটিমের বাবা ওই দিনই সাভার মডেল থানায় নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করেন। পরদিন (৪ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের মালঞ্চ হাসপাতালের পাশে দুটি কার্টনে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহের খ-িত অংশ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে মুন্সিগঞ্জের মেদিনা ম-ল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে একই ধরনের কার্টনে পলিথিন ও স্কচটেপে মোড়ানো অবস্থায় মরদেহের মাথা ও শরীরের কিছু খ-িত অংশ পাওয়া যায়। মরদেহের খ-গুলো পদ্মা সেতু (উত্তর) ও কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়। পরে সবুজের পরিবারের লোকজন খ-িত মরদেহের মুখ ও হাত-পায়ের অংশ দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। ঘটনার দুই দিন পর (৬ এপ্রিল) ভিকটিমের বাবা ইউসুফ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ করে হত্যা মামলা করেন। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা তদন্তকারী দল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবুজের পরিচয় নিশ্চিত করে এবং হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দুই আসামি রোকনুজ্জামান পলাশ ও সুমাইয়া আক্তার তৃষাকে চিহ্নিত করে। পলাশ তার খালুর বাড়িতে আত্মগোপন করলেও সুমাইয়া ফেনীতে পালিয়ে যায়। তাদের ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তবে পিবিআইয়ের নজরদারি ও তদন্তের মাধ্যমে তাদের পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সুমাইয়াকে ঢাকার গাবতলী থেকে অনুসরণ করে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই জানায়, সবুজ ও সুমাইয়ার মধ্যে ফেইসবুকে ফেইক আইডি ব্যবহার করে অশ্লীল এবং নগ্ন ছবি আদান-প্রদান শুরু হয়। এক পর্যায়ে, এই সম্পর্কের দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ হত্যার পরিকল্পনা গড়ে ওঠে এবং হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ হত্যাকা-ের স্থান থেকে সবুজের ব্যবহৃত আইফোন, হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, একটি কার্টন এবং মরদেহ বহনকারী গাড়ি উদ্ধার করেছে। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় এক ভ্যানচালক কামরুলও আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ হত্যাকা-টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে, তবে পিবিআইয়ের তদন্ত দল এটিকে একটি ভয়াবহ সামাজিক দ্বন্দ্বের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা অনলাইনে সম্পর্কের সূত্রে খুনের রূপ নিয়েছে।