সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুর গ্রামে অবস্থিত ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী একটি স্থাপনা। যশোরেশ্বরী মন্দিরের পশ্চিম পাশে এবং বংশীপুর শাহী মসজিদ থেকে অল্পদূরে অবস্থিত এ হাম্মামখানাটি ছিল রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজকীয় অতিথিশালার একটি অংশ। যদিও পুরো অতিথিশালা ধ্বংস হয়ে গেছে, তবুও এই হাম্মামখানাটি এখনো অক্ষত অবস্থায় টিকে রয়েছে। স্থানীয়দের মুখে এটি ‘হাবসিখানা’ নামেও পরিচিত। অট্টালিকার পাশে একটি কূপ থাকায় ধারণা করা হয়, একসময় এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। তবে স্থাপত্যিক বিশ্লেষণে এটি একটি স্নানাগার বলেই প্রতীয়মান হয়। ১৬ শতকের শেষ দিকে নির্মিত এই হাম্মামখানাটি জানালাবিহীন একটি গম্বুজাকৃতির ভবন। ছাদের গম্বুজে থাকা ছিদ্রগুলো দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করে পুরো ঘর আলোকিত করে তোলে। হাম্মামের সবচেয়ে বড় কক্ষটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত, যা মূল স্নানঘরের সমান আকৃতির। এই কক্ষের পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে প্রবেশপথ। কক্ষটির কেন্দ্রীয় স্থানে একটি এবং চার কোণায় চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। পূর্বদিকে একটি ঘরে ছিল পানি গরম করার ব্যবস্থা, যা সরবরাহ করা হতো মাঝখানের চৌবাচ্চায়। হাম্মামখানায় রয়েছে মোট তিনটি চৌবাচ্চা। প্রতিটিতে পাথর দিয়ে গরম করা পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থাও ছিল। ভবনের নির্মাণশৈলীতে ছিল পর্দার গুরুত্ব, যার কারণে বাহির থেকে ভেতর দেখা সম্ভব নয়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে দুটি ছোট দরজা। ঢাকা থেকে সরাসরি সাতক্ষীরায় যাওয়া যায় বিভিন্ন পরিবহনের বাসে। সাতক্ষীরা শহর থেকে লোকাল বাসে বংশীপুরে পৌঁছে কয়েকশ’ মিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় বংশীপুর শাহী মসজিদে। সেখান থেকে কিছুটা সামনে এগোলেই চোখে পড়ে ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা। শ্যামনগরের স্থানীয় বাসিন্দারা হাম্মামখানার অবস্থান জানেন, তাই পথ নির্দেশনায় সমস্যার সম্ভাবনা নেই। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ ভ্রমণের পথে ইচ্ছা করলেই ঘুরে দেখা যায় এই রাজকীয় স্থাপনাটি।