শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন হাজারো কৃষক ইসরাইল পুড়ছে ভয়াবহ দাবানলে ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, বন্ধ ওয়াগা সীমান্ত প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্কার করে আসছে বিএনপি: তারেক রহমান ভারতজুড়ে তীব্র সমালোচনা পোপের মৃত্যুতে বাংলাদেশে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার ডিএসসিসির ওয়ার্ড সচিব খাগড়াছড়িতে অপহৃত চবির ৫ শিক্ষার্থী মুক্তি পেয়েছে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশের ঘাতক বুলেটে শহীদ হলেন রাকিব

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

আয়-উপার্জন করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে নিজেকে বিয়ের উপযুক্ত করার আশা নিয়ে মাত্র এক মাস আগে ঢাকায় এসেছিল রাকিব হাওলাদার বুলেট (১৬)। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া খুনি পুলিশের ঘাতক বুলেট কেড়ে নিল তার প্রাণ, সাথে উপার্জনক্ষম হয়ে বিয়ের স্বপ্ন সবই। বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।
বয়স মাত্র ১৬ পার হয়েছিল। তাবলীগ জামায়াতের স্থানীয় আমীরের পরামর্শে দ্রুত বিয়ে করার ইচ্ছা জানিয়েছিল মাকে। বড় তিন ছেলেকে বিয়ে না করিয়ে এই বেকার ছোট ছেলেটিকে কীভাবে বিয়ে করাবেন এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান মা।
তখন মা ছেলেকে কাজ-কর্ম করে স্বাবলম্বী হতে আয়-উপার্জনের পথ করে নেয়ার কথা বলেন। বুঝদার রাকিব মায়ের পরামর্শে বেকারত্ব ঘোচাতে বড় ভাইদের কাছে ঢাকায় যায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মাম পরিহাস মাত্র এক মাসের মাথায় সব স্বপ্ন-সাধ অপূর্ণ রেখে তাকে লাশ হয়ে রাজধানী থেকে বাড়িতে ফিরে আসতে হয় ।
মা শিল্পী বেগম (৪২) তার সবচেয়ে আদরের দুরন্ত ছেলেটিকে হারিয়ে অধিক শোকে এখন পাথর। ছেলের রেখে যাওয়া ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, পুরস্কারের মেডেল, ক্রেস্ট আর কাপে একটি আলমারি সাজানো। ঘরে থাকা প্লাস্টিকের বড় ড্রামে কিছু ভাতের চাল এখনও অবশিষ্ট আছে। মৃত্যুর আগের মৌসুমে রাকিব নিজের হাতে বীজ তোলা, রোপন করা, ধানকাটা এমনকি চাল বানানো পর্যন্ত সব কাজ নিজেই করেছিল।
সেই চাল নিয়ে মা কাঁদেন আর বলতে থাকেন, ‘এবারও আমার বাবায় বীজ লাগাইছিল, মারা যাওয়ার আগের রাইতেও কইছে- ‘মা, বীজ কতদূর হইছে? গুনে গুনে দুই সপ্তা পরই বাড়ি আমু, তোমারে বাজার কইরা দিমু, আর ভুঁই রুইয়া (ধান লাগানো) ঢাকা ফিরমু।’ বাবায় আর ধান লাগাইতে না পারলেও এবারও বাবার বীজের ধানই আবার ঘরে আইছে।’
ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার কৈখালি বাজার এলাকার দক্ষিণ মহিষকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদারের (৪৮) ছেলে রাকিব হাওলাদার (১৬)। এলাকার সবার কাছে বুলেট নামে পরিচিত। একদিকে নামাজি আরেকদিকে খেলাধুলায় উৎসাহী রাকিব এলাকায় পরোপকারী হিসেবেও পরিচিত ছিল।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাতেও মায়ের সঙ্গে শেষ আলাপে বুলেট বলেছিল, মা, আমি কি ঘরে আইয়া একটু নতুন টিনের তলে ঘুমাইতে পারমু? মা উত্তরে বলেছিল, পারবা বাবা।
রাকিবের বড়ভাই সাইফুল হাওলাদার (২৫) ও সেঝ ভাই রাব্বি হাওলাদার (২০) রাজধানীতে কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন। মেঝ ভাই রাহাত হাওলাদার (২২)ও ঢাকায় কলার ব্যবসা করেন। পরিবারে চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল শহীদ রাকিব। তাদের একটি ছোটবোন আছে। নাম জান্নাত (১৫)।
৫ আগস্ট মৃত্যুর একমাস আগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে চাচাত ভাইয়ের প্লাস্টিক সামগ্রীর কারখানায় কাজে যুক্ত হন। কাজল প্লাস্টিক নামে প্রতিষ্ঠানটি মুরগি খামারের নানান পাত্র প্রস্তুত করে। ওই প্রতিষ্ঠানে রাকিবের আরও কয়েক চাচাত ভাই কর্মরত। তারা একই বাসায় থাকত।
মা শিল্পী বেগমের কথায় জানা যায়, ৫ আগস্ট বেলা ১১টা-১২টার দিকে ছেলে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু চাচাত ভাই লিটন ও রাসেলের কড়া বারণে আর যেতে পারছিল না। তখন দেয়ালে ঝোলানো টিস্যুরোল থেকে টিস্যু ছিঁড়ে টয়লেটে যাওয়ার ভান করে রাকিব। এরপরই সে আন্দোলনে চলে যায়।
রাকিব সময়মতো না ফেরায় কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই বুঝতে পারে রাকিব আন্দোলনে গিয়েছে। চাচাত ভাই লিটন ও রাসেল খুঁজতে গিয়ে আধঘণ্টার মধ্যেই বোরহানউদ্দীন কলেজ কলেজের পরে নাজিমুদ্দীন রোডে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পান।
সবাই যখন চিৎকার করে বলছিল এই লাশ কার? লিটন-রাসেল বলে ওঠে এটা আমাদের, আমাদের লাশ। মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়ার পরে চিকিৎসকরা জানান, মাত্রই মারা গেছে রাকিব।
বাড়ির ১৮ জন চাচাত ভাইয়ের মধ্যে রাকিবই ছিলো সবার ছোটো। ডান পাঁজরে লেগে বাম পাঁজর ছিদ্র করে বেরিয়ে গেছে ঘাতক বুলেট। সবাই আদর করে যাকে বুলেট ডাকত সেই রাকিব হাওলাদার বুলেটের জীবন যে পুলিশের ঘাতক বুলেটই কেড়ে নেবে তা কে জানত!
ভাদ্র মাসে এসে দেড় কুড়া জমি আর রোপন করা হয়নি রাকিবের। আগের দিন রাতে পাঠানো দেড় হাজার টাকা দিয়ে মাকে আঙ্গুলের চিকিৎসা করাতে বলেছিল। মুরগি আর আম কিনতে বলেছিল। মায়ের পাঁজরভাঙা আক্ষেপ এটাই– তার ছোট ছেলেটি লাশ হয়ে ফিরল বাড়িতে! ইটে গাঁথা নতুন টিনের ছাউনিতে ঘুমানো, মাকে বাজার করে দেয়া কিংবা বিয়ের স্বপ্ন সবই কেড়ে নিল স্বৈরাচারের বুলেট।
জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে রাকিবের পরিবারকে দেয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা, শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা, বিএনপির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com