বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
নতুন প্রজন্মের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস জানাতে হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা’ গাজীপুরে বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক: ওবায়দুল কাদের ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভায় মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো ছয়টি রাজ্যের ভোটাভুটিতে ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে বাইডেন জিয়াউর রহমানকে অসম্মান করা মানে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা : মির্জা ফখরুল নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ বাংলাদেশ : ধর্মমন্ত্রী

নারী :পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীতেও

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০

নারীরা পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীতেও। এখানেও তারা সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। এখন কনস্টেবল থেকে অ্যাডিশনাল আইজি পর্যন্ত নারী পুলিশের সরব উপস্থিতি। পুলিশের নারী সদস্যরা মেধা, যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে দেশবিদেশে কাজ করছেন। নারী পুলিশ এখন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলেছেন। তারা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে অভিযান পরিচালনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজপথে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন নারী পুলিশ সদ্যসরা।
বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘ মিশনেও নারীদের পাঠাচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। নারী পুলিশের আগ্রযাত্রা এখন চোখে পড়ার মতো। এখন অ্যাডিশনাল আইজিপি, জেলার পুলিশ সুপার এবং থানার অফিসার ইনচার্জ পদেও চাকরি করছেন নারীরা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুরু করে পুলিশের সব ইউনিটেই এখন নারী পুলিশ সদ্যসরা কাজ করছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল-টেকার হিসেবে ইতিমধ্যে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন তারা।
১৯৭৪ সালে স্পেশাল ব্রাঞ্ঝে সাত জন নারী কনস্টেবলসহ মোট ১৪ জন নারীকে নিয়ে নারী পুলিশের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে অস্থায়ী ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশে আট জন নারী এসআই ও ২০ জন কনস্টেবলের পদ সৃষ্টি করা হয়। এরপর আশির দশকে পুলিশ বাহিনীর অরগানোগ্রামে সংশ্লিষ্ট সব পদ স্থায়ীকরণের মাধ্যমে নারী পুলিশের অবস্থান শক্ত জায়গায় আসে। এর পর থেকে শুরু হয় নারী পুলিশের পদোন্নতি।
নারীদের পুলিশে যোগদান নিয়ে একসময় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যা এখন আর নেই। ১৯৮৪ সালে প্রথম ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে পাঁচ জন নারী পুলিশ অফিসার কাজে যোগদান করেন। এর পর প্রায় ১৪ বছর পুলিশ বাহিনীতে ঊর্ধ্বতন পদে নারী পুলিশ অফিসারদের নিয়োগ বন্ধ থাকে। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে আট জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আবার উন্মুক্ত হয়। এরপর খুব দ্রুত বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। সংখ্যার সঙ্গে বাড়তে থাকে নারী পুলিশের সুনাম আর সাফল্য। প্রসারিত হতে থাকে নারী পুলিশের কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তিও। কনস্টেবল থেকে অ্যাডিশনাল আইজিপিÍসব পদেই নারীদের সরব উপস্থিতি। পুলিশ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো প্যারেড পরিচালনা করেন নরসিংদী জেলার নারী পুলিশ সুপার।
বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশের সদস্যসংখ্যা ১৪ হাজার ৪৮০, জন যা মোট জনগণের ৭.৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম নারী পুলিশ কনটিনজেন্ট হাইতি মিশনে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ সালে। এই কনটিনজেন্টে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ছিল ১১০ জন। আন্তরিকতার সঙ্গে প্রায় সাড়ে ১৩ মাস তারা দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববাসাীর অকুণ্ঠ প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়াও তারা কঙ্গো শান্তিরক্ষা মিশনেও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। নারী ইউনিটের সদস্যরা এই দেশ দুটিতে তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও পেশাদারির ছাপ রাখতে সমর্থ হয়েছেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরকালে শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন। আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হারভে ল্যাডসুসও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উঠে এসেছে বিশ্বের বহুল প্রচারিত এবং জনপ্রিয় গণমাধ্যমেও। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের এক সংখ্যায় শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের এক বিশেষ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
২০১৭ সালে ২৮ জন নারী সার্জেন্ট যোগদানের মধ্যে দিয়ে রাজপথে কাজ শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে এর সংখ্যা ৫৫ জন। নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে চালু করা হয়েছে ‘উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক’। ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। তারা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও। বাংলাদেশ নারী পুলিশকে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা অন্যদের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ প্রদান করা হয়েছে। ছয়টি ক্যাটাগরিতে মোট ২০ জন নারী পুলিশ সদস্য এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। অপরাধ দমন ও নিরাপত্তায় নারী পুলিশরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির বিষয়ে অবদান রেখে চলেছেন। এখন সর্বত্র নারী পুলিশের প্রশংসা। লেখক : সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com