স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাগুরাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মাগুরার চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ ও বারি -১৫ ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেছেন। এরপর আবার ধান রোপণ করবেন কৃষকেরা। তাতে করে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। মাগুরার বিভিন্ন মাঠে চাষ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি -১৫। গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই খেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়।
চলতি বছরে মাগুরা জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তর। সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামের সরিষা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন।
লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে মাগুরা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। সদর উপজেলার আবালপুর গ্রামের সরিষা চাষি আবুল বাশার বলেন, নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।
শ্রীপুর উপজেলার ওপদা গ্রামের সরিষাচাষি নিয়ামত আলী জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়।
এছাড়া সরিষা আবাদে যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমাণ দেখা যাচ্ছে না। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন,- সরিষা চাষ সফল করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষকদের প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।