নতুন বছরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি কেমন হবে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অধিকতর সুসংগঠিত এবং স্মার্ট একটা দল গড়ে তোলা হবে। দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা আরো মজবুত করা হবে। সারা দেশে যেসব জেলা ও মহানগরে কমিটি হয়নি সেসব এলাকায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, বিতর্কিতরা যাতে দলের নেতৃত্বে আসতে না পারে সে বিষয়ে দল সচেষ্ট থাকবে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকারকে অব্যাহত সহযোগিতা দিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ।
সূত্রে প্রকাশ,একগুচ্ছ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল সংগঠনকে শক্তিশালী করা। এ জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করে সেখানে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা, মুজিববর্ষের বাকি কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, শোকাবহ আগস্ট ও বিজয় দিবসসহ দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। এছাড়া দলে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে একটি তালিকাও করার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। এ বছরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হওয়ায় পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিশেষভাবে দিনটি সাড়ম্বরে উদযাপন করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ওই অনুষ্ঠানে সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের জন্য দলের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হবে। এছাড়া পৌরসভা নির্বাচনের বাকি ধাপগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ের সুফল ঘরে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরেই কয়েক ধাপে দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরই ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে দলটি। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব এখনো থাকায় শীতের পুরো সময়টা স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটু ধীরগতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। শীতের পরেই পুরোদমে দল গোছানোর কাজে হাত দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসন করে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীনরা।
ইতোমধ্যে নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনার দিকনির্দেশনাও তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো হবে। এ জন্য যেসব জেলা-উপজেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে সেখানে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা হবে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মানুষের কল্যাণে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কর্মসূচি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা এবং দলকে ঢেলে সাজানোই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। এস এম কামাল বলেন, দলকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং মানুষের আস্থা অর্জন করাই আমাদের লক্ষ্য।
নতুন বছরে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতু নির্মাণ। এর কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে এবং সেটি নিজস্ব অর্থায়নে হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে করোনাকালীন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০০ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬৪ ডলার হয়েছে। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে ও যাচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়েও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নতুন বছরও তার কোনো ব্যতিক্রম নয়। আমরা দলকে আরো সুসংগঠিত করতে চাই, কারণ আমরা মনে করি দলের কারণেই আজকে দল রাষ্ট্রক্ষমতায়। সুযোগ-সন্ধানীদের স্বার্থ হাসিলের কারণে যাতে দল ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দলীয় পদ থেকে বাদ দেয়ার কাজ আমরা শুরু করেছি, এ বছরও সেটি অব্যাহত থাকবে।