রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে খাস কালেকশনের নামে দুর্নীতি: জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ নতজানু নীতির কারণে হাসিনা সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করেননি খেলাধুলা শরীরিক ওমানসিক বিকাশ ঘটায় : রেজওয়ানুল হক পাটগ্রামের দহগ্রামে বন্যা কবলিত পরিবারের মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সহায়তা প্রদান কালীগঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন ফটিকছড়িতে হামলার পর উল্টো মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ! লাকসামে ১৬৫ পরিবারকে স্পেন-বাংলাদেশ সোসাইটির নগদ অর্থ সহায়তা শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নড়াইলে হরিলীলামৃত স্কুলের শিক্ষকদের সম্মানী প্রদান ফুলপুরে বন্যার মারাত্মক অবনতি রায়গঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত

শুভনববর্ষ ১৪২৭

মো. হারুন অর রশীদ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

আজ মঙ্গলবার পহেল বৈশাখ শুভনববর্ষ ১৪২৭।আজ সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। স্বাভাবিক ভাবেই সে স্বপ্ন, করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বিশ্ব-নতুন বালাদেশ । বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙ্গালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ প্রথমবারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতার কথা দেশ। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী জুড়ে থাকার কথা মঙ্গল শোপভাযাত্রা নিয়ে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারাবিশে এখন চলছে করোনাকাল। মানুষের পৃথিবীতে এখন চলছে অনিশ্চিত সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানিয়েছেন, এবার কোনো শোভাযাত্রা করা যাচ্ছে না। তবে এর পরিবর্তে তারা একটি পোস্টার করেছেন। যে পোস্টারটি অন্তর্জালের মাধ্যমে ঘুরবে সারা দেশে। শোভা পাবে রাজধানীর দেয়ালেও। এর শ্লোগানের মাধ্যমে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষকে শক্তি জোগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শিল্পকলার প্রবীণ এই অধ্যাপক জানান, কালো জমিনের ওপর লাল, সাদা ও হলুদ রঙের বর্ণমালায় লেখা হয়েছে শ্লোগান। সবার ওপরে বৈশাখ ১৪২৭ লেখার পর রক্তিম বর্ণমালায় ওপরের অংশে লেখা হয়েছে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের বিখ্যাত সংলাপ ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না’। তার নিচে সাদা বর্ণমালায় লেখা হয়েছে ‘এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ সেরা। বর্তমানের এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ জয়ী হবেই।’ এই লেখার পর বড় অংশজুড়ে দৃশ্যমান হয়েছে একটি বর্ণিল সরাচিত্র। এর নিচে লেখা আছে মূল শ্লোগান।

এর আগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। এটা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এবার তাই কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী রমনার বটমূলে হচ্ছে না ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে সরকারি এবং বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।

এদিকে আজ বাংলা নববর্ষের দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির বা উপাসনালয়ে না গিয়ে নিজ-নিজ গৃহে অবস্থান করে আনুষ্ঠানিকতা পালনের আহবান জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনাকরে সরকারের নির্দেশ অনুয়ায়ী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি এ অনুরোধ জানানো হয়।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারাদেশ।

পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করবার আর কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা পায় এবং জাতি হয় ঐক্যবদ্ধ।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙ্গালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই  নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া।–এইচ আর/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com