রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আশার আলো

খবরপত্র ডেস্ক প্রতিবেদন:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

জাপান তার কোম্পানিগুলোকে চীনের বাইরে স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে তাদের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অগ্রগতি হতে পারে। ব্লুমবার্গ নিউজে অরুণ দেবনাথ লিখেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইটো সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যেহেতু করোনা মহামারি শুরু হয়েছে চীনে, তাই সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখতে জাপানের কোম্পানিগুলোকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে । এতে বাংলাদেশ ভাল সুবিধা পাবে।
জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যখন প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোন, তখন দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের কোম্পানি স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ১০০০ একর জায়গার ওপর বিস্তৃত এই শিল্প এলাকা। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটির মতে, এখানে জাপানি ২০০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের আশা করছে বাংলাদেশ।
চীনে বেতন কাঠামো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে এরই মধ্যে জাপানের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের খরচ কম এমন স্থানগুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের সরবরাহ চেইন চীন থেকে সরিয়ে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশে অবকাঠামোর উন্নতি দেখতে পাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত ইটোর মতে, গত ১০ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির সংখ্যা তিনগুন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০। তিনি বলেন, শিল্প এলাকার উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের প্রকল্পে জাপান বিশেষ উন্নয়ন ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে ৩৫ কোটি ডলার। এশিয়ায় স্পেশাল ইকোনমিক জোনে এটাই জাপানের সর্বোচ্চ সহায়তা।
উল্লেখ্য, আড়াইহাজারের এই শিল্প পার্ক কার্যক্রম শুরু করার কথা ২০২২ সালে। রাষ্ট্রদূত ইটোর মতে, এখানে সুজুকি মোটারস করপোরেশন এবং মিটসুবিসি করপোরেশনের মতো অটোমেকারদের কাছ থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে জাপানের সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দুটি প্রতিষ্ঠান হলো জাপান ট্যোবাকো ইনকরপোরেশন ও হোন্ডা মোটারস কোম্পানি। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার এক কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মধ্যে অন্যতম এই দেশ। এখানে আছে কমপক্ষে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। জাপানের তুলনায় শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ এ দেশের আয়তন। জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শতকরা ৫.২ ভাগ। তবে বর্তমান অর্থবছরে তা শতকরা ৭.৪ ভাগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে এই প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮.২ ভাগ পূর্বাভাস করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এখনও এ অঞ্চলে ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জাপানি রাষ্ট্রদূত ইটো বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার হার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে দ্রুত হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ব্লুমবার্গ ‘বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়া ভারতের জন্য চপেটাঘাত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছিল। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি আয় বাংলাদেশের চেয়েও কম হতে পারে, সম্প্রতি এক রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই খবরে ভারতে চরম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও অর্থনীতি মোকাবেলায় ব্যর্থ মোদি নতুন করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। আইএমএফ’র ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু টুইট করে বলেছেন, ‘যেকোনও উদীয়মান অর্থনীতি ভাল করছে, সেটি অবশ্যই ভাল খবর। তবে অবাক করে দেয়ার মতো বিষয় হল পাঁচ বছর আগে যে ভারতের অর্থনীতি ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল এখন তারাই পেছনে পড়ে যাচ্ছে!’ সেই ১৯৯০-এর দশক থেকেই ভারতের স্বপ্ন চীনের দ্রুত সম্প্রসারণকে অনুকরণ করা। তিন দশক ধরে এই অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের পিছনে ছিটকে পড়ার ঘটনা নিশ্চয়ই ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিতে একটি চপেটাঘাত। পশ্চিমাবিশ্ব চীনের বিপক্ষে একটি অর্থবহ কাউন্টারওয়েট চায়। নিম্ন-মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা না পড়লে সেই অংশীদারিত্বের বিষয়টি ভারতের ওপরই বর্তায়।
তুলনামূলক এই অদক্ষতা আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দিতে পারে। যদি একটি বৃহৎ-শক্তিশালী ও উচ্চাকাক্সক্ষী রাষ্ট্র তার নিজের ছোট্ট একটি প্রতিবেশি, যাদেরকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে সহায়তা করে স্বাধীন করেছে- তাদের পেছনে পড়ে যায়, এতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তাদের প্রভাব হ্রাস পেতে পারে।
আসলে ভুলটি কোথায়? এজন্য করোনভাইরাস মহামারীকে অবশ্যই দোষ দেয়া যায়। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ জুনের মাঝামাঝি সময়ে শীর্ষে পৌঁছেছিল। আর ভারতের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কেবল এখন কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তার আগে অধিকাংশ দেশের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশে করোনায় ৫ হাজার ৬শ’রও কম মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। আর ৮ গুণ বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে করোনায় ২০ গুণেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ খবরটি হল, আইএমএফ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতের আরোপিত কঠোর লকডাউন প্রকৃত উৎপাদনের ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস করে দেবে। এটি করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তার চেয়েও প্রায় ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি। আর্থিক সঙ্কট, স্বল্প পুঁজিযুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা এবং বহুবর্ষ বিনিয়োগের ভীতি- এসব ভারতের কোভিড-১৯ পরবর্তী চাহিদা পুনরুদ্ধারকে বিলম্বিত করবে। আরও খারাপ খবর হল, এমনকি মহামারী না থাকলেও ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে যেতে পারত। পেনসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ শৌমিত্রো চ্যাটার্জী এবং ‘ভারতের রফতানি-নেতৃত্বের বৃদ্ধি: অনুকরণীয় ও ব্যতিক্রম’ শিরোনামে ভারতের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ান একটি নতুন গবেষণাপত্রে এই কারণটি দেখিয়েছেন। প্রথমে ভারতের প্রবৃদ্ধির ব্যতিক্রমবাদ বিবেচনা করুন। বাংলাদেশ ভালো করছে কারণ এটি পূর্ববর্তী এশীয় টাইগারদের পথ অনুসরণ করছে। এর স্বল্প দক্ষ পণ্য রফতানি দরিদ্র দেশটির কর্মক্ষম বয়স-জনসংখ্যার অংশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ভিয়েতনামও নিজের ওজন থেকেও কিছুটা উপরে উঠে গেছে। আসলে দুই দেশই চীনের অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিচ্ছে।’ সূত্র: ব্লুমবার্গ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com