চুড়িহাট্টার আগুন
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের দুই বছর পূর্ণ হলো। এ ঘটনায় করা মামলার চার্জশিট এখনও আদালতে জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া চুড়িহাট্টার যে দু’টি জায়গায় রাসায়নিক গুদাম সরানোর কথা, তার একটিতে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে, অন্যটিতে বাস করছে তিন শতাধিক বস্তিবাসী। ফলে শিগগিরই রাসায়নিক ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে না পুরান ঢাকা।
পুলিশ বলছে, এজাহারে সন্দেহভাজন দুই আসামি আছে। যাদের বিষয়ে কোনও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। যার কারণে চার্জশিট জমা পড়েনি আদালতে। এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। যেটা প্রস্তত করতেই সময় লেগেছে অনেক। এখন ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ প্রতিবেদনের কী অবস্থা জানতে চাইলে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ৬৭টি মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। ডিএনএ রিপোর্টগুলোও হাতে পেয়েছি। আমাদের দিক থেকে সকল কাগজপত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।
ডিএনএ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও কেন চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, এই মামলায় দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা জামিনে আছেন। আমরা সব ধরনের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। এজাহার নামীয় দু’জন সন্দেহভাজন আসামি আছে। যাদের নাম-ঠিকানা এখনও পাইনি। দ্রুতই পাবো। তবে সেটা পাই বা না পাই, চার্জশিটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব। পুলিশ রিপোর্টও দেবো। মামলার অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট। পুলিশ সন্তুষ্ট হলেও মামলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী মো. আসিফ আহম্মেদ। তিনি বলেন, দুই বছর হয়ে গেলো, মামলার অগ্রগতি নেই। বিষয়টা দুঃখজনক। কিন্তু আরও দুঃখের বিষয়, প্রশাসনের চোখের সামনেই ভবনটির আশপাশে আবারও রাসায়নিকের গুদাম গড়ে উঠেছে। এদিকে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা স্থানান্তরের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সরিয়ে নিতে রাসায়নিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রকল্প চূড়ান্ত করতেই লেগে যায় ৯ বছর। এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আরমানিটোলা, বাবুবাজার, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক ভবনের নিচে রাসায়নিকের রমরমা ব্যবসা। প্রতিদিনই বিভিন্ন রাসায়নিকে গুদাম ভর্তি করছেন ব্যবসায়ীরা। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর ২৪টির মতো সুপারিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস। যার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী কয়েকটি বাস্তবায়ন হয়েছে। অগ্রগতি কম দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের। ২০২০ সালের মধ্যে পুরান ঢাকা থেকে ১৬৭ কোটি টাকার ব্যয়ে অস্থায়ী কেমিক্যাল পল্লীতে গুদাম স্থানান্তরের কথা থাকলেও ঘরই নির্মাণ হয়নি। শেষ হয়নি জমি অধিগ্রহণও। অথচ প্রকল্প মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে।
গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে তিন শতাধিক পরিবার বাস করছে। তাদের কবে অপসারণ করা হবে বা রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে, তা স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজার চুড়িহাট্টার মোড়ে কেমিক্যাল থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ওয়াহেদ ম্যানশনসহ আশপাশের পাঁচটি ভবন পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ৭১ জন। এর মধ্যে ৬৭ জনের মরদেহ ঢামেকে আসে। যার মধ্যে পুরুষ ৫৮, নারী ৫ এবং শিশু ৪ জন। আহত হয় আরও অনেকে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারিতে অবহেলার কারণে সৃষ্ট অগ্নিসংযোগের ফলে মৃত্যু ঘটাসহ ক্ষতিসাধনের অপরাধে চকবাজারের ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৩২/৩৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. আসিফ চকবাজার থানায় মামলা করেন।