রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

বুলেটের জন্য বুক পেতে দেব : ইশরাক

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ, জনস্রোতে উত্তাল রাজধানী

বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য আমি বুক পেতে দেব।’ গতকাল বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবি খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজজামান সেলিম, বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শাহাদাত হোসেন, তাবিথ আওয়াল প্রমুখ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমাবেশ চলছে।
ইশরাক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার লালসা থেকে নিজেদের মধ্যে বিবাদ, বিভাজন, বিরোধ, মারামারি, হানাহানি করছি। এখানে লাভ কার হচ্ছে? এখানে একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, মাফিয়া গোষ্ঠী, ভূমিদস্যু যারা বিএনপির সময় ব্যবসা করেছে, আওয়ামী লীগের সময়েও ব্যবসা করছে, জমি দখল করেছে, বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করেছে গরিব-দুখী কৃষকদের সম্পদ লুটপাট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই যে সাম্রাজ্যবাদীশক্তি আজকে আমাদের ঘাড়ে এসে চেপে বসেছে, ৫০ বছর পরে এসে আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মেনে নেব না। আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, এই আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে এই রক্ষীবাহিনীর পতন ঘটাতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য আমি আমার বুক পেতে দেব। পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যাব না। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাআল্লাহ এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর পতন ঘাটাবো।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে আমি লজ্জাবোধ করছি যে, আমরা এখনো স্বাধীনতাকে খুঁজে বেড়াই, আমরা এখনো গণতন্ত্রকে খুঁজে বেড়াই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে রূপ দিয়েছে, সেটি আমাদেরকে পাকহানাদার বাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের আজকের গণতন্ত্রের এই সংগ্রামে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। আমাদের সিলেটের জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী, ঢাকার কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে আন্দোলন করেছিল, সেসময় ২৭ জন নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছিল। তাদের লাশটি পর্যন্ত আজও পাওয়া যায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেন, জিনিসপত্রের দাম কমান, মানুষকে কথা বলার স্বাধীনতা দিন। তা না হলে জনগণের যে বিস্ফোরণ ঘটবে, সেই বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাবেন না।’
আলাল বলেন, ‘সামনে রমজান মাস আসছে। বাজারে যান, খোঁজ নিয়ে দেখেন, জিনিসপত্রের দাম তিন-চারগুণ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ, লবণ ও তেলের দাম বেড়ে গেছে। হাসিনার উপদেষ্টাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেছেন এই ফাঁকে হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে লুটপাট করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেভাবে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন তাতে মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে বলবেন, জিয়া উদ্যানের কবর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারার জন্য ব্রাশফায়ার করছে। তিনি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন।’
আলাল বলেন, ‘এই যে ডিজিটাল কালো আইন। এই আইনের মধ্য দিয়ে যে কুকীর্তিগুলো হচ্ছে। এই কুকীর্তি বন্ধ করার জন্য হলেও এ আইন বাতিল করা দরকার।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনার নিজের ঘরে যে হা-ডু-ডু খেলা হচ্ছে। সেগুলো আগে বন্ধ করেন। নোয়াখালীতে কাউয়ামুক্ত ও কাউয়াওয়ালা আওয়ামী লীগের মধ্যে লেগে গেছে।’
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশ দুই ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগ বলছে মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে ওসি প্রদীপ, আরেক ভাগ সেটার বিরুদ্ধে নারাজি দিচ্ছে। আবার হাজী সেলিমের ছেলেকে একভাগ মামলা দিচ্ছে, আরেক ভাগ ছেড়ে দিচ্ছে। এই নাটকগুলো কেন করা হচ্ছে?’
বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ জনস্রোতে উত্তাল রাজধানী: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপক্ষ নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের নামে সাজানো মামলা ও সাজা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তরে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় সমাবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই সমাবেশস্থল ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নির্ধারিত খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীর ঢল নামে। সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার ও প্রত্যাহার এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের সরকারবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলেছেন সমাবেশস্থল।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ৬ সিটি করপোরেশনের দলটির সাবেক মেয়র প্রার্থীরা বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ২৩ শর্তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বিএনপিকে সমাবেশের এই অনুমতি দেওয়া হয়। দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এ সমাবেশ করবে বিএনপি।
এর আগে গত ৭ মার্চ সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করে বিএনপি। আবেদনে মোহাম্মদপুর থানাধীন শহীদ পার্ক মাঠে আগামী ১০ মার্চ দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশ করার কথা জানায় দলটি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিএমপি ২৩টি শর্ত দিয়ে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিল।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সব সিটি করপোরেশনের দলীয় মেয়র প্রার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৫ বিভাগীয় শহরে ছয়টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরই মধ্যে তিন বিভাগে সমাবেশ করেছে দলটি। আগামী ২০ মার্চ চট্টগ্রামে সমাবেশ হবে। এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে দুটি সমাবেশ হবে। আগামী ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে হবে আরেকটি সমাবেশ। এজন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান- এই তিনটি স্থানের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ঢাকার কর্মসূচি সফল করতে মহানগর বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাবিথ আউয়ালকে ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে। তারা ইতোমধ্যে থানা-ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com