দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মৌচাষিরা ১৩ লিচু বাগানে বাক্স বসিয়ে ৪০ টন মধু সংগ্রহ করেছে। যার বাজার মূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা। লিচু বাগানে মৌচাষ করে মৌচাষিরা যেমন মধু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচুর ফলন ২৫ ভাগ বেশী আশা করছেন কৃষকরা। লিচু বাগানে প্রতি বছর খরচ করতে হয় না এবং অল্প পরিচর্যায় মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় বলে অনেকেই লিচুর বাগান করেছেন। চলতি বছরে চিরিরবন্দর উপজেলায় পাঁচশ’ ১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে লিচুর বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। উপজেলার পুনট্টি ও ভিয়াইল ইউনিয়নে লিচু বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছে। বাগান মালিক হানিফ খান ও আরিফ হোসেনের বাগান গুলোতে প্রায় দুই শতাধিক লিচু গাছ থাকায় টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে মৌচাষিরা ১৩টি বাগানে একশ’ থেকে দেড়শটি করে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌচাষি দুলাল হোসেন তালুকদার জানান, বৈজ্ঞানিক উপায়ে উদ্ভাবিত মৌচাষ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। বাগানে তারা দুই শতাধিকের বেশি ব্রড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রাণী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে। ১০ হতে ১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি বাক্স হতে চাষিরা ৫ হতে ৬ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকে। যে লিচু গাছে মৌমাছির আগমন বেশি হয় সে গাছের মুকুলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকে তেমনি মৌচাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে মৌচাষিরা প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ মণ মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, চলতি বছর প্রতিটি লিচু বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আর এ কারণে প্রচুর মৌমাছির আগমন দেখা দিয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে বেশী পরাগায়ন ঘটে থাকে। ফলে শতকরা ২৫ ভাগ লিচুর ফলন বেশি হয়। তাছাড়া বর্তমানে মৌচাষিদের দ্বারা উৎপাদিত মধু দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখার ফলে মৌচাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।