প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা কথা বলবো একটি প্রচলিত ভুল কথা নিয়ে। যা আমরা মানুষের মুখে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুনে থাকি। তা হলো- ‘মানুষের কর্মই তার ভাগ্য ঠিক করে দেয়, ভাগ্য বলতে কিছু নাই।’
এই উক্তিটি শুনতে বেশ আকর্ষণীয় ও মুখরুচক মনে হলেও এটি মূলত মিথ্যা এবং অযৌক্তিক। আর এই কথাটি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতেও একজন ঈমানদারের ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো কথা। অযৌক্তিক এবং অবাস্তব এ জন্য যে, ‘মানুষের কর্মই তার ভাগ্যকে ঠিক করে দেয়’ এটি অসত্য কথা আমরা জানি। কারণ আমাদের সমাজে বহু মানুষ আছেন তারা অনেক পরিশ্রম করেন, অনেক সাধনা করেন, অনেক কাজ করেন, নিয়মিত সুচারুরূপে পরিশ্রম করেন কিন্তু সেভাবে কাক্সিক্ষত ফলাফল পান না। এরকম বহু উদাহরণ আমাদের চারপাশে রয়েছে। আবার অনেকে খুব বেশি পরিশ্রম যে করেছেন তা নয়; কিন্তু তারপরেও তার ফল তিনি বেশ ভালো পেয়েছেন।
কর্মই যদি ভাগ্য ঠিক করে দেয় তাহলে যত জন কাজ করছে সবাই তো ফলাফল ভালো পাওয়ার কথা। অথচ আমরা দেখছি কর্ম সঠিকভাবে করার পরেও অনেকে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাচ্ছেন না। সুতরাং বোঝা গেল ‘কর্মই আমাদের ভাগ্য ঠিক করে দেয়’ এটি অযৌক্তিক, অসত্য এবং অবাস্তব কথা।
এর পাশাপাশি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের উক্তি কোনো ঈমানদারের করার সুযোগ নেই। এটি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক একটি উক্তি। রাসূলে কারিম সা: ঈমানের যে মূল স্তম্ভের কথা বলেছেন তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বতন্ত্র একটি স্তম্ভ হলো তাকদির তথা ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস করা। তাই ঈমানদার হওয়ার জন্য যেই কথাগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে তার মধ্যে একটি হলো- ভাগ্য তথা ভালো এবং মন্দ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাদের কর্মের মাধ্যমে কোন ফলাফল লাভ করব এবং কোন দিকে এগুচ্ছি সেটি আল্লাহ সুবহানাহু জানেন। সেটি তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং সেটির ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিধায় ভাগ্য বলতে কিছু নেই বলে বিশ্বাস করা মানে তাকদিরকে অস্বীকার করা। আর আমরা আগেই বলেছি তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং স্বতন্ত্র একটি।
এটি মূলতো বস্তুবাদী হতে গিয়ে আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করা, আল্লাহর ফায়সালাকে অস্বীকার করা, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদিরকে অস্বীকার করার শামিল। অতি দুনিয়ামুখী হতে গিয়ে আমরা কিন্তু নিজের অজান্তের অনেক সময় ঈমান থেকে সরে যাচ্ছি এবং বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছি। কর্ম কখনোই মানুষের ভাগ্যকে পরিপূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দিতে পারে না। অতএব এ ধরনের অবাস্তব এবং অযৌক্তিক কথা থেকে এবং ইসলামবিরোধী ঈমানবিরোধী কথা/উক্তি থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। শুনতে ভালো শোনা গেলেও, মুখরুচক ও আকর্ষণীয় বা খুব বেশি আধুনিক/আপডেটেড মনে হলেও ঈমানবিরোধী কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রিয় বন্ধুরা, সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে কারিম সা: বলেছেন, আল্লাহ নভমণ্ডল এবং ভূমণ্ডল সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর আগে প্রত্যেকটা জিনিসের (প্রাণী ও বস্তু) তাকদির তথা ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘আর প্রতিটি বিষয় আল্লাহ তায়ালার কাছে নির্ধারিত’ (সূরা রাদ : ০৮)। অর্থাৎ প্রতিটি ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর কাছে আগে থেকেই নির্ধারিত। বিধায় তাকদির তথা ভাগ্যকে অবিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না।
তাই কোনো অবস্থাতেই উপরিউক্ত উক্তিটি বলা বা বিশ্বাস করা যাবে না। আল্লাহ আমাদের এরকম ঈমান বিধ্বংসী ও কুফরি মতবাদ এবং কথা থেকে হেফাজতে রাখুন। আল্লাহ আমাদের সুস্থ চিন্তা এবং শুদ্ধ কথা বলার তাওফিক দান করুন। আমীন।