মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন

অধ্যাপক মতিউর রহমানের ইন্তেকাল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান (জন্ম:১৮ ডিসেম্বর ১৯৩৮ ইন্তেকাল ৮ এপ্রিল ২০২১) গতকাল বৃহস্পতিবার ১২-১৪মি. সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির চেয়ারম্যান শরীফ বায়জীদ মাহমুদ ও সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী। শোকবাণীতে তারা বলেন, আমরা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান রব যেন তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদেরকে সবরে জামিল দান করেন।
অপরএক একযৌথ বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের আহবায়ক আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও সমন্বয়ক মোস্তফা মনোয়ার। শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেনÑ অধ্যাপক মতিউর রহমান ছিলেন একজন বর্শিয়ান লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক ও সম্পাদক। তার লিখিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় একশতটি। তিনি ফররুখ গবেষনা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তাঁর মতো গুণীজনের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য এক উজ্জ¦ল নক্ষত্র হারালো। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। অধ্যাপক মতিউর রহমান নতুন প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকদের জন্য এক অনুসরণীয় প্রতিভা ছিলেন। তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্ম চর্চা একান্ত প্রয়োজন। সম্ভাব্য সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভা আয়োজন করার আহবান জানাচ্ছি।
মহান আল্লাহ তাঁর পরিবারকে ধৈর্য় ধারণ ও তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করুন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:মুহম্মদ মতিউর রহমান ১৯৩৭ সনের ১৮ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩৪৪, ৩ পৌষ ) সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর থানার চরনরিনা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু মুহাম্মদ গোলাম রববানী, মাতার নাম মোসাম্মৎ আসুদা খাতুন। মুহম্মদ মতিউর রহমানের পূর্ব পুরুষ এলাকায় শিক্ষাদানের ব্যাপারে সুখ্যাতি অর্জন করেন। সে সুবাদে তাদের বাড়িটি ‘পন্ডিত বাড়ি’ হিসাবে পরিচিত। মতিউর রহমান পিতা-মাতার তিন পুত্র ও নয় কন্যার মধ্যে ষষ্ঠ সন্তান। তার স্ত্রীর নাম বেগম খালেদা রহমান। তাদের দুই পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।
মতিউর রহমান গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫০ সনে নরিনা মধ্য ইংরাজি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে ১৯৫৪ সনে স্থানীয় পোতাজিয়া হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৫৬ সনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মতিউর রহমান ১৯৫৬ সনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৫৮ সনে আই. এ ও ১৯৬০ সনে বি.এ পাশ করেন। এরপর ১৯৬০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৬২ সনে বাংলায় এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৬২ সনের নবেম্বরে মতিউর রহমান ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী নৈশ কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত হন। এখানে ১৯৭৭ সন পর্যন্ত যথাক্রমে অধ্যাপক, ভাইস-প্রিন্সিপাল এবং ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝখানে তিনি ১৯৬৫ সনে চার মাসের জন্য করটিয়া সা’দত কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে থাকাকালীন সময়ে ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর ঢাকাস্থ আমেরিকান প্রকাশনা সংস্থা ‘ফ্রাংকলিন বুক্স প্রোগ্রামস’ এ সহকারী সম্পাদক ও প্রথম বাংলা বিশ্বকোষ প্রকল্পে অন্যতম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৭০ সনের জানুয়ারিতে দৈনিক সংগ্রাম প্রকাশিত হলে মতিউর রহমান সেখানে সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৭ সনের ১২ ফেব্রুয়ারি মতিউর রহমান সংযুক্ত আরব-আমিরাতে চলে যান এবং সেখানে ১৯৯৬ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুবাই চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রকাশনা বিভাগে সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পাশাপাশি সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে লেখালেখি ও সাংগঠনিক কাজে বিশেষভাবে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় মতিউর রহমান একনিষ্ঠভাবে চিন্তা-চেতনায় ও কর্মে স্বদেশ, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের ভাবনাগুলি সংহত করে প্রকাশ করার বিশেষ উদ্যোগ নেন।
মতিউর রহমান ১৯৯৭ সনের জানুয়ারিতে দেশে ফিরে ঢাকাস্থ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলা বিভাগে প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কর্মরত থেকে তাঁর চিন্তা ও কর্মের সমন্বিত রূপ প্রকাশে সচেষ্ট হন। মতিউর রহমান মূলত একজন সাহিত্যিক। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকেও তার সাহিত্য-কর্ম সর্বদা অব্যাহত থেকেছে। তিনি এখনও সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে নিরলসভাবে আজীবন গবেষণা ও লেখালেখি করেছেন।
তাঁর লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো : সাহিত্য কথা (১৯৭০), ভাষা ও সাহিত্য (১৯৭০), সমাজ-সাহিত্য সংস্কৃতি (১৯৭১), মহৎ যাদের জীবন কথা (১৯৮৯), ইবাদতের মূলভিত্তি ও তার তাৎপর্য (১৯৯০), ফররুখ প্রতিভা (১৯৯১), বাংলা সাহিত্যের ধারা (১৯৯১), বাংলা ভাষা ও ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন (১৯৯২), আযান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য প্রসঙ্গে (১৯৯২), ইবাদত (১৯৯৩) মহানবী (সা.) (১৯৯৪), ইসলামের দৃষ্টিতে ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি (১৯৯৫), মহানবীর (স) আদর্শ সমাজ (১৯৯৭), ছোটদের গল্প (১৯৯৭), ঋৎববফড়স ড়ভ ডৎরঃবৎ (১৯৯৭), বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য (২০০২), মানবাধিকার ও ইসলাম (২০০২), ইসলামে নারীর মর্যাদা (২০০৪), রবীন্দ্রনাথ (২০০৪), স্মৃতির সৈকতে (২০০৪), মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ মহানবী (সা.) (২০০৫), মাতা-পিতা ও সন্তানের হক (২০০৬), ফররুখ প্রতিভা (পরিবর্তিত দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০৮), ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার (২০০৮), সংস্কৃতি (২০০৮), বাংলাদেশের সাহিত্য (২০০৮), সাহিত্য চিন্তা (২০১০), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (২০১০), হাজার বছরের বাংলা কবিতা (২০১০), ইউরোপ আমেরিকার পথে জনপদে (২০১০), কিশোর গল্প (২০১০)। সমকালীন বাংলা সাহিত্য, আরব উপসাগরের তীরে, বাঙালি মুসলমানের নবজাগরণে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা, নানা প্রসঙ্গ, মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্য-রতœ, আশির দশকের কবি ও কবিতা ইত্যাদি।
অনুবাদ : ইরান (১৯৬৯), ইরাক (১৯৬৯), আমার সাক্ষ্য (১৯৭১)।
সম্পাদনা : পাবনা থেকে প্রকাশিত ‘আমাদের দেশ’ মাসিক পত্রিকা (১৯৫৮-৬০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফজলুল হক মুসলিম হল বার্ষিকী’ (১৯৬১-৬২)। ঞৎধফব ্ ওহফঁংঃৎু গধমধুরহব, উঁনধর (১৯৭৮-৯৬), ‘প্রবাসী কবিকণ্ঠ’ (১৯৯৩), ‘প্রবাসকণ্ঠ’ (১৯৯৪), স্বদেশ সংস্কৃতি (১৯৯৮) ফররুখ একাডেমী পত্রিকা (১৯৯৮-), ভাষা সৈনিক সংবর্ধনা স্মারক (২০০০), ব্যারিস্টার কোরবান আলী স্মারক পত্রিকা (২০০৭)।
সংস্কৃতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য মুহম্মদ মতিউর রহমানকে ১৯৯৬ সনে ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল’ দুবাই-এর পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
১৯৯৭ সনে মতিউর রহমান ফররুখ একাডেমী (২০০৬ সনে রেজিস্ট্রিকৃত নাম: ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ‘ফররুখ একাডেমী পত্রিকা’র সম্পাদক।
কবি মহিউদ্দিন আকবরের ইন্তেকাল: কবি মহিউদ্দিন আকবর আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি গত মঙ্গলবার দিবাগত ভোর রাত তিনটায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কবি মহিউদ্দিন আকবর ছিলেন একজন কবি, ছড়াকার ,গল্পকার ও সম্পাদক ছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে প্রকাশ, কবি মহিউদ্দিন আকবর গত মঙ্গলবার দুপুরে ( ৬ এপ্রিল) ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক করেন। এরপরে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তার সুহৃদয় দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের সমন্বয়ক মোস্তফা মনোয়ার জানান, কবি মহিউদ্দিন আকবর একজন ছড়াকার, লেখক ও নজরুল গবেষক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের একদম শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। যুদ্ধে তিনি তার ভাই, চাচাসহ একাধিক আপনজনকে হারিয়েছেন। তার জানাজার নামাজ বাদ জোহর বাসাবো দশেরমোড় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির পক্ষ থেকে প্রিয় কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম মহিউদ্দিন আকবরের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি, মহান রব যেন তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদেরকে সবরে জামিল দান করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com