সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

লোকজনকে ঘরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১

লকডাউনের পঞ্চম দিনে এসে মানুষকে ঘরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনের একেকটি দিন গেছে আর মানুষের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রবিবার (১৭ এপ্রিল) ব্যাংক খোলা থাকবে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরে মানুষ ও গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। সেই সুযোগ নিয়ে অপ্রয়োজনে যেন কেউ বের না হয় সেটি নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান চ্যালেঞ্জ।

করোনার সংক্রমণের হার এখনও বেশি। মৃত্যুর হারও রেকর্ড অতিক্রম করছে প্রতিদিন। তাই লকডাউন আপাতত আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। করোনাতে শনিবারও আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১০১ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে সরকারি হিসেবে মোট মারা গেলেন ১০ হাজার ২৮৩ জন। শুক্রবারও দেশে ১০১ জনের মৃত্যু হয়। শনিবার সরকারি ছুটির দিনে করোনার ঊর্ধ্বমুখী ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মাঝেও বিভিন্ন অজুহাতে চলাচলের চেষ্টা করছেন অনেকে। তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি বেশি ছিল। আর তাই গন্তব্যের যৌক্তিকতা না থাকায় কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা কাউকে জরিমানা করা হয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মানুষকে ঘরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো সংক্রান্ত একটি শীর্ষ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেইসভার মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলতে পারে। চলমান ৮ দিনের লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে ২১ এপ্রিল রাত ১২ টায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করছি অপ্রয়োজনীয় কারণে বাইরে না বের হতে। জনগণের সহায়তায় আমরা পাচ্ছি। আমরা এক্সপেক্ট করি নিজের জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য চিন্তা করে আরেকটু সচেতন থাকবেন নগরবাসী। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না। যারা অপ্রয়োজনে বের হয় তাদের যাচাই-বাছাইয়ের একটি প্রক্রিয়া বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। লকডাউন যতদিন চলমান থাকবে পুলিশি তৎপরতা ও জোরদার থাকবে।’
করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১৪ কোটি ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে: দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৪ কোটি ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৪ কোটি ১৩ লাখ ৫৩৮। এর মধ্যে ৩০ লাখ ২৩ হাজার ৮১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৭ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে করোনার একাধিক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ২৩ লাখ ৭২ হাজার ১১৯। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৭৫৬ জনের। আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬১। এর মধ্যে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৯ লাখ ১৩৪। এর মধ্যে তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ১৫ হাজার ২৫২। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৯৯। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’
মহামারির শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই দাবিকে আরও জোরালো করে চীনের উহানের ল্যাবের এক ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ানের বক্তব্য। লি মেং ইয়ান বলেন, চীনের ল্যাবেই তৈরি করা হয়েছে করোনাভাইরাস। এটি মানুষের তৈরি বলে তার কাছে শতভাগ প্রমাণ রয়েছে।
হংকংয়ে জন্ম নেওয়া ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ান পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। চীন হত্যা করতে চেয়েছিল বলে ভয়ে মার্কিন মুলুকে পালিয়ে যান তিনি। এদিকে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার শুরুর দিকের সময়কার মূল তথ্যগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তদন্ত দলকে সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীন। তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে না দিয়ে সারমর্ম আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কিভাবে করোনা মহামারির সূচনা হয়েছিল, এর উৎস কী, তা জানার প্রচেষ্টা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনা থেকে সুস্থ প্রায় ১২ কোটি: মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী জোরকদমে চলছে টিকাদান কার্যক্রম। তবুও এর প্রকোপ এখনো থামছে না। বিভিন্ন জনপদে নতুন রূপে হানা দিচ্ছে ভাইরাসটি। ফলে বেড়েই চলছে মৃত্যু এবং সংক্রমিতদের সংখ্যা। অবশ্য সুস্থতার সংখ্যাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্যহারে।
গবেষণাভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পরা এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৪ কোটি ১৩ লাখ ৫৩৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩০ লাখ ২৩ হাজার ৮১৩ জনের। আর বিশ্বব্যাপী এ মারণ ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছে উঠেছেন ১১ কোটি ৯৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৭ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫ লাখ ৮০ হাজার ৭৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৭২ হাজার ১১৯ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার ৩২২ জন। যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। এশিয়ার মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশটি। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬১ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৬৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার ৯৪ জন। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৩৪ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৮৯ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬১ জন।
করোনা শনাক্তের তালিকায় চারে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫২ লাখ ৬০ হাজার ১৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১ লাখ ৫৯৩ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৪ জন। এদিকে শনাক্তের তালিকায় পাঁচ নাম্বারে থাকা রাশিয়ায় ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৩ রোগী। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৯ জন। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। এখন পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ২৮৩ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লাখ ৮ হাজার ৮১৫ জন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com