সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

বঞ্চনার শিকার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি, পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা হস্তান্তর ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন সীতাকু- উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি। ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার এসব অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন তিনি। একইসাথে স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় এর নিকট। জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদানকৃত ওই স্মারকলিপিতে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি উল্লেখ করেন গত ২০১৯ সালে ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শপথের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তুু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্মানি ভাতা প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থ বিভাগের সুপারিশকৃত ২১/১১/২০১২ ইং তারিখের অফিস আদেশ ০৭.০০.০০০০.১২৯.০০.০২৬.১২.৯৯ নং স্মারকের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানগণের যাতায়াত ভাতা ও দৈনিক ভাতা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে।সেইসাথে ১৭ টি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা-অনুষ্ঠানের আপ্যায়ন ভাতা দেওয়ার নির্দেশিকা উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল গঠন ও ব্যবহার নির্দেশিকায় আছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের ৩১/০৫/২০১৫ খ্রিঃ তারিখের ৪৬.৪৫.০২০.০৯.০৬.০০৬.২০১৫- ৫৮০ নং স্মারকের উপজেলা পরিষদ কতৃক গৃহিত প্রকল্প সমূহের ২৫% নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং উপজেলা পরিষদের এডিপিকৃত উন্নয়ন বরাদ্দ নারী ভাইস চেয়ারম্যান বরাদ্দকৃত পরিমাণের উপর ৩% প্রাপ্য এবং এই ৩% নারীদের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার্য। কিন্তুু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় উন্নয়ন মূলক কোন কার্যক্রমে নির্বাচিত হওয়ার গত ২ বছরেও আমাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব পালনের দীর্ঘ দুই বছর অতিক্রম হতে চললেও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে আমাকে সুকৌশলে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান তার সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন।অদ্যাবদি আমি বারংবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপরোক্ত বিষয় উপস্থাপন করেও শুধুমাত্র আমার সম্মানী ভাতা ব্যতিত কোন প্রকার যাতায়াত ভাতা বা অন্যান্য ভাতা গ্রহণ করতে পারি নাই এবং কোন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামোর সুনির্দিষ্ট আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। স্মারকলিপিতে সীতাকুণ্ড উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি আরো উল্লেখ করেন, প্যানেল চেয়ারম্যান (১) নির্বাচিত হওয়া স্বত্বেও চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে আমাকে দায়িত্ব হস্তান্তর না করে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। যা একজন নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতি অসম্মান ও অপমানজনক আচরণ। নারী প্রতিনিধি হিসেবে আমার সাথে হয়ে আসা বৈষম্যমূলক আচরণ ও সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে আপনার হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছি। এসব বিষয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, নারী নেতৃত্ব গঠনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন তা দেশের ইতিহাসে কোন প্রধানমন্ত্রী নেননি। রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজনীতি,অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। যার উদাহারন হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত মহিলা আসন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। দেশের বৃহৎ একটি অংশের নেতৃত্বে এখন নারীরা রয়েছেন, যার পিছনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। আমরাও সেই ধারাবাহিকতায় সমাজের প্রতি স্তরে নারীর অংশগ্রহণ, মতামত প্রদানের সুযোগ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তুু ভাবতে অবাক লাগে আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে বঞ্চনার শিকার। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে আমাকে বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সরকার নির্ধারিত যেসকল সুবিধা আমার প্রাপ্য তা আমি পাচ্ছি না। গত ২ বছরে আমি কোন যাতায়াত ভাতা ও আনুষঙ্গিক ভাতা পায়নি। শুধু তাই নয় উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে আমাকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি চেয়ারম্যান অফিসে আমার জন্য একটা চেয়ারও রাখা হয়নি যেখানে আমি বসে অফিস করতে পারি। জয়নব বিবি জলি আরো বলেন, আমাকে নানাভাবে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কি লাভ নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে? কি লাভ সভা-সেমিনারে বক্তৃতায় নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বুলি ছেড়ে? যদি নিজেরাই নারীদের দাবিয়ে রাখি? আসলে ক্ষুদ্র ও হীন মানসিকতার মানুষদের কারণেই আমরা নারীরা সমাজের মর্যাদা প্রাপ্তি থেকে দূরে। আমরা আসলে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি, যার প্রমাণ আমিই। জলি বলেন, এতোদিন চুপ করে ছিলাম অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে। কিন্তুু এ অনিয়মের প্রতিবাদ না করলে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনে আমার জন্য অফিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে যা বহু আবেদনের ফল। অফিস বরাদ্দ দেওয়া হলেও আমাকে এখনো চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমি উপজেলায় আসলে অফুস সহকারীরা দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কি করে একজন অফিস সহকারী আমি ভাইস চেয়ারম্যান এর সাথে এমন আচরণের দৃষ্টতা দেখাতে পারে? কার ইশারায় এসব হচ্ছে? এসব প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নারীর প্রতি এমন অপরাজনীতি ও অপকৌশল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার ও নির্দেশনার পরিপন্থী কাজ। অবিলম্বে আমার কার্যালয় বুঝিয়ে দেওয়াসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের পূর্ন ক্ষমতা হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কর্মকান্ড আমাকে স্বাধীনভাবে পালন করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাঁধা বা বলপ্রয়োগ না করার নিশ্চিয়তা চাই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com