টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধানচাষে ভিন্নতা এনে হতাশায় ডুবেছেন কয়েকজন চাষি। বেগুনি পাতায় মোড়া ধানক্ষেত দেখতে অসাধারণ বটে। তবে ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। জানা গেছে, নতুন প্রজাতির ধান বিধায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে এর চাষ করে। সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখানে বেগুনি রঙের পাতার ধান দেখতে মনোমুগ্ধকর। চোখ ধাধানো অপরূপ সবুজের মাঝে বেগুনি ফসলের মাঠ। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন প্রতিদিন দেখতে আসছে ভিন্ন প্রজাতির বেগুনি পাতায় মোড়া এই ধানক্ষেত। কেউ বা ছবি তুলছে আবার কেউ বা চাষির কাছ থেকে গল্প শোনতে আসছেন এ ধান চাষের।
সবুজ আর সোনালি ফসলটি যদি বেগুনি রঙের হয় তাহলে সোনালি ধানের দেশে বিষয়টি একটু সাড়া পড়ার মতোই। যে কারো প্রথম দেখায় ভাবতে অবাক লাগবে। এমনি বেগুনি পাতার ধানচাষ করে অবাক করে দিয়েছেন উপজেলার বেগুনি রঙের ধান চাষিরা। কিন্তু আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ চাষিরা।
উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের ঘিওরকোল মধ্যপাড়ার বেগুনি রঙের ধানচাষি তুষ্টু লাল সরকারের ছেলে দুলাল চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, প্রথম এক কেজি বেগুনি ধানের বীজ বন্ধুর কাছ থেকে সংগ্রহ করি। এক কেজি ধান বোরো মৌসুমে রোপন করে প্রায় চার মন ধান পেয়েছি। স্বাদে প্রায় আমন ধানের চালের মতো।
দুলাল জানান, এলাকার অন্য চাষিরাও আগ্রহ প্রকাশ করায় পরে তাদের বীজ দিয়েছেন নতুন জাতের ধান চাষের জন্য। পাশাপাশি তার ভাই কৃষ্ণ সরকারকেও এ ধানের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তিনি। তবে দুলাল অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা কেউ পরামর্শ দিতে এখনো আসেননি। তার বন্ধু একজন কৃষি অফিসার। যতটুকু সহযোগিতা, তার কাছ থেকেই নিয়ে ভিন্ন জাতের এ ধানের চাষ করেছেন তিনি।
উপজেলার বেকড়া এলাকার সোরহাব মিয়ার ছেলে আবু বকর ছিদ্দিক জানান, তিনি পেশায় পশুচিকিৎসক। সখের বসে এক নেতার কাছ থেকে এ বছর এক কেজি বেগুনি ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। বীজতলা নিজেই তৈরি করে বেগুনি ধানের চারা করেন। এরপর মাটি ভেদে ফলন কেমন হয় তা পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেতে বোরো ধানের পাশাপাশি ওই ধানের চারা রোপন করেছেন। ফলন বাম্পার হবে বলে আশা করছেন তিনি।
এখন অভিযোগের সুরে তিনি বলছেন, উপজেলার কৃষি অফিসের সহযোগিতা চাইলে তারা নতুন প্রজাতির ধান বিধায় এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন বলে এড়িয়ে যান। অবশ্য কৃষি অফিসের সহযোগিতা না পেলেও আবু বকরের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নতুন ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, বিদেশী নতুন এ জাতের ধান নিয়ে গবেষণা চলছে। ফলনের বিষয়ে আবহাওয়া অনুকূলে কি না সেটিও পর্যাবেক্ষণ করতে হবে। পুরোপুরি ধারণা ও পরীক্ষামূলক কোনো রেজাল্ট না পেলে পরামর্শ দেয়া ঠিক হবে না। তবে ফলন প্রতি হেক্টরে প্রায় তিন টন হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, রোবো ২৯ জাতের ধানের তুলনায় বেগুনি ধানের ফলন অনেক কম। কত দিনের মধ্য ধান কাটা যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা পোকা মাকড়ের আক্রমণ ও পুষ্টিগুণ কেমন- তা গবেষণায় প্রকাশ না পাওয়ায় এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।