আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন। প্রতিবছর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হতো। বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচিতে মুখর থাকতো রাজপথ। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ছুটিও রয়েছে। কিন্তু এবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দিবসটির সব কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে গণমাধ্যমগুলোও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন ওই শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিকদের দমাতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১১ শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন আরও বহু শ্রমিক। পরে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে পহেলা মে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে এবছর সরকার সব রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তবে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বাণী দিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলোও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অপ্রতিরোধ্য করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত বিশ্বে এবার মহান মে’ দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। শ্রমজীবী জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনে আমি আমার নিজের এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশে কর্মরত সকল বাংলাদেশী শ্রমিকসহ সারা বিশে^র শ্রমজীবী-কর্মজীবী জনগণকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষ এখনও মহান মে’ দিবসের অর্জন দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, ন্যায্য মুজুরী ও শোভন জীবন থেকে বঞ্চিত। কিন্তু তার পরেও তারাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, বিদেশে উপার্জন করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এই দু:সময়েও তারা রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মহান মে দিবসের প্রাক্কালে আমি বাংলাদেশের শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবী জনগণের অবদান বিবেচনা করে তাদের প্রাপ্য অধিকার, ন্যায্য মুজুরী ও শোভন জীবন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও মালিক পক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। ১ মে “আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার দিবস” তথা ‘মে দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আজ শনিবার ১ মে ‘মে দিবস’। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এখনো তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে আসছে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সে আন্দোলন আজও পুরোপুরি সফলতা লাভ করেনি। যার ফলে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময়েও শ্রমিকগণ তাদের মজুরি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ কথা আজ অত্যন্ত স্পষ্ট যে, মানবরচিত কোনো মতবাদই মানুষের সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে সক্ষম নয়। ‘শ্রমিকদের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করার জন্য’ রাসূলে করীম (সা.) জোর তাগিদ দিয়েছেন। শ্রমিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্যে রাসূলে করীম (সা.)-এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্যেই মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের জন্যই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শ্রমিক সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। কল-কারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব এক ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। মাঝে মাঝেই শ্রমিকরা শোষণ, জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ জানালেও তাদের ন্যায্য অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমরা মনে করি, ইসলামী শ্রমনীতি চালু করার মাধ্যমেই শ্রমিক সমাজের প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে এবং মালিকদের স্বার্থও সংরক্ষিত হতে পারে। করোনা ভাইরাস বিস্তৃতির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করে যথাযথ গুরুত্বসহ ১ মে ‘আন্তর্জতিক শ্রম অধিকার দিবস’ তথা ‘মে দিবস’ পালনের জন্য তিনি দেশের সকল শ্রমজীবী মানুষ ও সর্বস্তরের জনতার প্রতি আহ্বান জানান।