নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
সাংবাদিককে দায়িত্ব পালন করতে দেবেন না? হাইকোর্টের প্রশ্ন
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির নিহতের ঘটনায় করা মামলায় মো. ইকবাল বাহার ও সিরাজুল হক ওরফে আবুল হাশেমকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তাদের জামিনের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করা হয়েছে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহীনুর বেগম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। এর আগে গত ১৮ মে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইকবাল বাহারের জামিন আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
শুনানিতে আদালত বলেন, আমাদের কি দুর্ভাগ্য যে, একজন অসহায় মানুষ (সাংবাদিক) সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও সেখানে দাঁড়ানো কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। অথচ তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছে। আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেবেন না? তাকেও মেরে ফেলবেন?
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, কি দুর্ভাগ্য। একজন নিরীহ সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। আসামিরা তার ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে দিয়ে যায়। এ সময় ওই সাংবাদিক সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। সেখানে অনেক লোক থাকলেও কিন্তু কেউ তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপর তার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা এবং তার বিরোধীপক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেখানে স্থানীয় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। ওই ঘটনায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। পরে বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরসহ গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মারা যান বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা মাওলানা নুরুল হুদা মো. নোয়াব আলী মাস্টার বাদী হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলাটিতে এখন পিবিআই তদন্ত করছে।
এ মামলায় কাদের মির্জার অনুসারী মো. ইকবাল বাহার ও সিরাজুল হককে গত ২১ মার্চ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগেই গত ১৩ মার্চ ইকবাল বাহার ও ১৬ মার্চ সিরাজুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অবস্থায় ইকবাল বাহার ও সিরাজুল হককে ব্যবসায়ী দাবি করে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিতে রাজি হননি। আদালত তাদের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজের আদেশ দেন।