সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

দরিদ্রদের জন্য সরকার কিছুই করছে না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ জুন, ২০২১

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য সরকার কিছুই করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার (২ জুন) ঢাকা জজ কোর্টে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হলো দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য সহায়তা। পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, করোনা মহামারির ফলে দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। আগের দরিদ্র তিন কোটি। তার মানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে, অবশ্যই তাদের (দরিদ্রদের) কাছে টাকা পাঠাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে। সেটা তারা (সরকার) করছে না। এখনো তারা একইভাবে তেলে মাথায় তেল দিচ্ছে। অর্থাৎ, যাদের ইন্ডাস্ট্রি-টিন্ডাস্ট্রি আছে তাদেরকে আবারও প্রণোদনা দিচ্ছে। এই যে দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো, তাদেরকে কিছুই দিচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীকাল বাজেট দিতে যাচ্ছে এই সরকার। আজকে মুস্তফা কামাল সাহেব একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউতে বলেছেন, সব ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছেন। মুস্তফা কামাল সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালো বোঝেন। অর্থনীতি কতটুকু বোঝেন তার নিদর্শন আমরা খুঁজে পাইনি।’
ফখরুল বলেন, ‘গতবার যখন করোনা শুরু হলো, তখনই আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে এসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, করোনাকালে যে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক শ্রেণি এবং আজকে আইনজীবীরা আমাকে অনেকে স্লিপ দিয়েছেন যে, কোর্ট বন্ধ থাকার ফলে তাদের কোনো আয় নেই। যারা আইনজীবী আছেন তারা অত্যন্ত কষ্টে আছেন। এদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তাহলে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটা কীসের? মানুষকে তারা বোকা বানিয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে সবাইকে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সরকারের কী দরকার? ব্যাংক থেকে নেবে। এটা প্রণোদনা হলো কোত্থেকে? এটা প্রণোদনা নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে শোধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘প্রণোদনা তাকেই বলে, সরকার দুঃসময়েই আপনাকে যে আর্থিক সাহায্যটা করছে, সেটা ফেরত না নেয়া। আপনি সেই প্রণোদনার টাকা কাজে লাগাবেন। আমরা প্রস্তাবনায় বলেছিলাম, দিন আনে দিন খায় মানুষগুলোকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাস অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। গত কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে, গাইবান্ধার একজন কৃষক সবজি চাষ করে বলেছেন, ভাই, বিক্রি হচ্ছে না। কারণ ট্রাক যায় না, ট্রাক আসে না। সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে আমাদেরকে মেরে ফেললে ভালো হতো। তাহলে কাকে প্রণোদনা দিচ্ছে? যে লোকগুলো লুট করছে, দেশের অর্থনীতিকে একেবারে শূন্য পর্যায় নিয়ে গেছে তাদেরকে দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বড় বড় দালাল তৈরি করছেন আর বলছেন উন্নয়ন। মনগড়া প্রবৃদ্ধির হার দিচ্ছেন আর বলছেন, উন্নয়ন। উন্নয়ন সেটা নয়।উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, সে যেন ভালো খেতে পায়, বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকে—সেটাকে বলে উন্নয়ন। এমন উন্নয়ন করেছেন, হাসপাতালে বেড নেই। একটা হাসপাতাল বানিয়েছেন কোভিডের সময়ে, ওইটা রাতের মধ্যে উধাও হয়ে গেল! ব্যবসা, আবার নতুন করে নতুন কমিশন পাবে। এটা তো কমিশন এজেন্ট সরকার, জনগণের সরকার না।’
বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোন্দকার মো. হযরত আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম, হোসেন আলী খান হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সরকার প্রতিহিংসার কারণেই খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না :
সরকার প্রতিহিংসার কারণেই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে এখনো অসুস্থ অবস্থায় আছেন। এই সরকার কত বড় প্রতিহিংসা পরায়ন, তাদের যে পায়ের নিচে মাটি নেই। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন যে বাইরে নিয়ে যাও। তারা (সরকার) বাইরে যেতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে তাদের দুবর্লতা। তাদের রাজনীতির যে দেউলিয়াপনা, জনগণ থেকে যে বিচ্ছন্নতা তারই প্রমাণ। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা দুর্নীতিপরায়ন সরকারে পরিণত হয়েছে। এ সরকার জনগণের ওপরে অত্যাচারী সরকারে পরিণত হয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারে পরিণত হয়েছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পরে সবাই ভেবেছিল যে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে, বিএনপিকে আর দেখা যাবে না। কারণ আসল নেতাই চলে গেছেন। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি একজন গৃহবধূ ছিলেন তিনি পতাকাকে তুলে ধরছেন। কিসের পতাকা? স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকা, যেটাকে ধারণ করে এ দেশের মানুষ বেঁচে আছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার মূলমন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের আকাঙ্ক্ষা ও গণতন্ত্র। দীর্ঘ নয় বছর পতাকাকে তুলে ধরে স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। এখন অবধি বেগম খালেদা জিয়া… আমি তো মনে করি, এই দেশে জীবিত আছেন যেসমস্ত রাজনীতিবিদ তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিয়শী নেত্রী হচ্ছে বেগম জিয়া। তার অবদার আমি মনে করি কারো চেয়ে খাটো নয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। উনি কারাগারে বলেই গণতন্ত্র এখন কারাগারে। গণতন্ত্র বন্দী হয়ে আছে। আমাদের অসংখ্য নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, গুম হয়ে গেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। তারপরেও কিন্তু বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি সরকার। বিএনপি আছে, চলছে ও অত্যন্ত সোচ্চার হয়েই আছে।’
সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শকে সামনে নিয়ে তার যুদ্ধ করার যে মানসিকতা তাকে সমানে নিয়ে ও বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাব অনুসরণ করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে পুঁজি করে তার নেতৃত্বে ও ১৩ হাজার মাইল দূরে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যাকে আমরা সবাই তারণ্যে অহংকার বলি, যার নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি, তাকে নিয়েই আমাদের হারিয়ে যাওয়া যে গণতন্ত্র তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো। আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারবো ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে পারবো এই আহ্বান আমি জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কখনো পিছু ফিরে তাঁকাবেন না। আর কখনো এই কথা মনে করবেন না যে আমরা পারবো না। আমরাই পারবো, অবশ্যই ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবো। যে দানব আমাদের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে, যে দানব শুধুমাত্র লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’
এ সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন-কর্মের ওপর মরহুম সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর লেখা গ্রন্থ দু’টি দলের সকল নেতাকর্মীকে পড়ার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিথীকা বিনতে হোসাইন ও ইয়াসীন আলী প্রমুখ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com