রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

টাকা সাদা করার সুযোগের সিদ্ধান্ত ৩০ জুনের পর

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ জুন, ২০২১

আগামী অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার অবারিত সুযোগটি থাকছে কি না তা দেখার জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শন করার যে বিধানটি চলতি বছরে বাজেটে রাখা হয়েছে তা মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এটি আগামীতে থাকবে কি না তা ৩০ জুনের পর জানা যাবে। তিনি আরো বলেছেন , করোনার কারণে কত মানুষ বেকার ও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে সে পরিসংখ্যান তার কাছে নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কাজ করলে বোঝা যাবে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ব্যবসাবান্ধব’ হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, ব্যবসাবান্ধব বাজেট হওয়াতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে। একই সাথে বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
গতকাল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটোত্তর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে নিয়ে প্রশ্নোত্তর-নির্ভর সংবাদ সম্মেলনটি করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় করোনাকালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান হারিয়েছে। অনেক মানুষের সম্পদ খরচ হয়ে গেছে। এমন একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপন করেছি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাজেট বাস্তবায়ন করি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড় দেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, যদি আমরা করহার আস্তে আস্তে কমাই, তাহলে আমাদের আদায় বাড়বে। একই সাথে আয়কর আইনটিকে সহজ করা হবে। আইনটি যদি সহজ করতে পারি, করদাতাদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রাজস্ব আদায় অনেক বাড়বে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিভিন্ন খাতে (পুঁজিবাজার, জমি, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র, নগদ অর্থ ইত্যাদি) অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের যে অবারিত সুযোগ রাখা হয়েছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এতে করে বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ চলতি ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে- এমন ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ এভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় সৎ করদাতারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও আমাকে বলেছেন। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হবে কি না কিংবা এর সময়সীমা আরো বাড়ানো হবে কি না- সেটি জানতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় বিভিন্ন মহল বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেন। আর শুধু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া নয়, বলা হয়েছে, এনবিআর অর্থের উৎস জানতে চাইবে না। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্য কোনো সরকারি সংস্থাও জানতে চাইবে না।
এবার বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন প্রাকবাজেট আলোচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরাও বলেছেন যে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়। তারা এমন সুযোগ দেখতে চান না। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া ‘মহামারীকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে’ ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে করোনার টিকা ক্রয়ে অর্থের সঙ্কট হবে কি না- এমন আশঙ্কার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যাই থাক, প্রয়োজনে অর্থের জোগান দিতে কোনো সমস্যা হবে না। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এক বছরে সরকার যত মানুষকে টিকা দিতে পারবে, তার চেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ আছে। সবমিলিয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও নেয়া যাবে। প্রসঙ্গক্রমে, তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। করোনাকালে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হলেও সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, দেবো।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরো বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট ক্যাপাবল। ২০১৯ সালে আমরা বলেছি, সে দিন খুব দূরে নয়, যে দিন আমরা অন্য দেশকে ঋণ দেবো। আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, ঋণ দেবো।’ প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। করোনাকালে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হলেও সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, দেবো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে আমরা যা বলেছি তা অর্জন করেছি। এটা অর্জন করতে যে সমস্ত নেটওয়ার্ক দরকার সেগুলো খুব শক্তিশালী। সামষ্টিক অর্থনীতির গতিমুখিতা অত্যন্ত অগ্রসরমুখী। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারো বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাবো।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সারা দুনিয়ায় আলোচনা চলছে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের ৩০ তারিখে আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জের রিজার্ভ ছিল ৩২ পয়েন্ট ৭ বিলিয়ন ডলার, এক বছর পর সেটা ৩২ থেকে ৩৬ বিলিয়নে চলে আসল। এক বছরের মাঝে চার বিলিয়ন বাড়ল। এরপর গত ডিসেম্বরে সেটা ৪৩ পয়েন্ট ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আর গতকাল সেটা ছিল ৪৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরো বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট ক্যাপাবল। ২০১৯ সালে আমরা বলেছি, সেদিন খুব দূরে নয়, যে দিন আমরা অন্য দেশকে ঋণ দেবো। আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, ঋণ দেবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com