সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

কষ্টে চলছে জীবন: তবুও আঁকড়ে ধরে রাখছে বাপ-দাদার পেশা

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ জুন, ২০২১

মোঃ আবুল কালাম। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে দেহে বার্ধক্যের ছাপ। সেই দশ বছর বয়স থেকেই বাবার হাত ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিল-পাটার ধারের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি। তার পূর্বপুরুষেরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিল-পাটায় ধারের কাজে নিয়োজিত ছিল।তার মতো এই গ্রামের অনেকেই এ পেশায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু আধুনিক সভ্যতায় মেশিনে তৈরি রান্নার উপকরণ ( হলুদ, মরিচ, জিরা,) গুঁড়ো বাজারে পাওয়ায় এখন আর মহিলাদের শিল-পাটায় বেটে রান্না করার প্রয়োজন হয় না। তাই কমে গেছে শিল-পাটার চাহিদা। ফলে গ্রামের লোকেরা এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে তিনি বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে এখনো জীবন-জীবিকার তাগিদে শিল-পাটা ধারের কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করছেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামে। পিতা রইচ উদ্দিন। এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে কাটছে দিন। সেই কাকডাকা ভোরে শিলপাটা ধারের যন্ত্রপাতি কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে যান। শহরের অলিগলি কিংবা গ্রামের মেঠোপথে পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে চলেন। গ্রামের বাড়িতে কিংবা শহরের বাসার সামনে গিয়ে গলা চেঁচিয়ে ডাকতে থাকেন, ‘লাগবে শিল-পাটা ধার! প্রতিদিন পায়ে হেঁটে ৮ থেকে ১০ মাইল ছুটে চলেন কাজের সন্ধানে। যেসব মহিলাদের শিল- পাটা ধারের প্রয়োজন তারাই তার এই ডাকে সাড়া দেন। প্রতিটি শিল পাটা ধার দিতে ৪০থেকে৫০ টাকা নিয়ে থাকেন। এভাবে দিনশেষে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হয়। তা দিয়ে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাবার ও তরিতরকারি নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। স্ত্রীর স্বপ্ন কিংবা সন্তানের চাওয়া ঠিকমতো পূরণ করতে পারেননি সে। তবুও এত কষ্টের মাঝেও তার মুখে ফুটে থাকে হাসি। মুগ্ধ হয়ে দেখার মত এই ধার কাটনেওয়ালার হাতের নিপুন কাজ। পাটা ও নোড়াতে বাটাল-ছেনি দিয়ে ছোট্ট একটি হাতুড়ির সাহায্যে ঠুকে ঠুকে ধার কাটানো দেখতে শিশুরা গোল হয়ে ঘিরে ধরে।সে কত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পাটার পাথরটি খোদায় করে চলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাড়া পাটার গা মাছের আঁশের মত রূপ ধারণ করে ফেলেন । শ্রমের সাথে শিল্পের সক্ষতা বাঙালি মানসে যেন প্রোথিত। পাটা ধার কাটনিওয়ালার দক্ষতা আর গৃহস্থের ইচ্ছা অনুযায়ী পাটাতে ধার কেটে কেটে ফুটিয়ে তুলে মাছ, ফুল, লতা ও পাখির ছবি। আবুল কালাম বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে বাপ- দাদার পেশায় আছি। বহু কষ্টে দিন কাটলেও অন্য পেশা আমার ভালো লাগেনা। তাই জীবনের শেষ অব্দি এই পেশায় থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। কালের গতি আমাদের ঐতিহ্যেকে যাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে মেশিনে ভাঙা মশলা। ভোজনরসিক বাঙালিদের ঐতিহ্যে আজো আছে হাতে বাটা মশলায় তৈরি খাবার। এখন হাতে বাটা মশলার বদলে মেশিনে ভাঙানো গুড়া মশলার প্রচলন এসেছে। তারপরও অনেকে হাতে বাটা মশলায় তৈরি খাবার পছন্দ করেন। এখনও টিকে আছে হাতে বাটা মশলা তৈরির শিল-পাটা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com