সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে ফরিদপুরে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল বাবা ছিলেন বাসচালক মা দরজি, ছেলে লন্ডনের মেয়র ওবায়দুল কাদেরের ভাই শাহাদাতের মনোনয়ন বাতিল হাওরের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ অপারেশনের নামে ‘টর্চার সেলে’ পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন: হারুন

দুঃসাহসী গুপ্তচর ডানিয়েল এলসবার্গ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

ডানিয়েল এলসবার্গ। কি এক দুঃসাহস তার! পেন্টাগনের মতো সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে তিনি একের পর এক টপ-সিক্রেট ডকুমেন্ট ফটোকপি করে ফেলেন। তার আশা ছিল, এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যাপক ব্যয়বহুল একটি যুদ্ধের ইতি ঘটবে। তিনি যেসব পেপার এমন করে ফাঁস করেছিলেন তা ‘পেন্টাগন পেপারস’ নামে পরিচিত। পেন্টাগণের ক্লাসিফায়েড এসব ডকুমেন্ট তিনি ফটোকপি করে বাইরে নিয়ে আসেন। এতে দেখা যায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধে কত বেশি জড়িত ছিল আমেরিকা। এসব ডকুমেন্ট ফাঁস করার ফলে তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তার ডকুমেন্ট ১৯৭১ সালে চলে যায় পত্রপত্রিকার হাতে। এরপর তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু পরে তা খারিজ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন তার এই পেন্টাগন পেপারস ফাঁস নিয়ে তোলপাড় হয়। কিন্তু ডানিয়েল এলসবার্গের হাতে শুধু এই একটি বিষয়ের ডকুমেন্টই ছিল না। একই সময়ে তিনি আরেকটি গোপন স্টাডি কপি করে ফেলেন। তাতে দেখা যায়, ১৯৫৮ সালে তাইওয়ান সঙ্কটের সময় পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিকে কতবেশি সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রধানরা। ৫০ বছর ধরে এই গবেষণা চলছে। কিন্তু ২০১৭ সালের আগে বিষয়টি ভার্চুয়াল জগতের নোটিশে আসেনি। ২০১৭ সালে ডানিয়েল এলসবার্গ অনলাইনে প্রকাশ করে দেন পুরো ডকুমেন্ট। গত মাসে এ বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস। তিনি পেন্টাগণ পেপারস ফাঁস করার জন্য যে অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন এবারও তার বিচারের ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে এই তত্ত্ব ফাঁস করার জন্য। ডানিয়েল এলসবার্গ-এর বয়স এখন ৯০ বছর। তিনি বলেছেন, জেলে যাওয়ার ভয়ে তিনি ভিত নন। এ নিয়ে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
কয়েক দশক ধরে সরকার এবং সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে একজন অক্লান্ত সমালোচক ডানিয়েল এলসবার্গ। ১৯৬০ এর দশকে পারমাণবিক কৌশল নিয়ে হোয়াইট হাউজকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের মূল্যায়ন করেছিলেন। ওই সময়ে তিনি যা শিখেছিলেন তা ছিল তার বিবেকপ্রসূত। তার কাছে মনে হয়েছিল তিনি যা জানেন, তা যদি মানুষ জানতে পারে তাহলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে অপ্রতিরোধ্য এক চাপ আসতো। এ কারণে তিনি বিষয়টি পরে প্রকাশ করেছেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের বাড়ি থেকে বলেছেন, আমি চেয়েছিলাম পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে। তার মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, তাইওয়ানের একটি পারমাণবিক যুদ্ধ হবে ভয়াবহ একটি হুমকি। এর কারণ জানতে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের অনিষ্পন্ন সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে। ১৯৪৯ সালে চীনে গৃহযুদ্ধের শেষ হওয়ার পর থেকে তাইওয়ানকে নিজেদের দাবি করে আসছে চীন। তখন থেকেই তাইওয়ানকে একটি বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে চীন। প্রয়োজন হলে তাদেরকে জোরপূর্বক চীনের সঙ্গে একীভূত করার কথা বলা হয়। ফলে দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানে চীন যদি আক্রমণ চালায় তাহলেই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার কথা চিন্তা করে তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
ডানিয়েল এলসবার্গ বলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচলিত যুদ্ধে চীন জয়ী হবে বলে মনে করা হয়েছিল। এর ফলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে চীনের বিরুদ্ধে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক যুদ্ধের প্রশ্ন তাৎক্ষণিকভাবে সামনে চলে আসতো। ১৯৫৮ সালে যদি প্রয়োজন হতো তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা ঠিক সেই কাজটিই করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে তা আর প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ডানিয়েল এলসবার্গ যে জিনিসগুলো প্রকাশ করেছেন, তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নেতারা কেন এমনটা বিশ্বাস করতেন। তিনি যেসব ম্যাটেরিয়াল সামনে এনেছেন তার মধ্যে কয়েক ডজন পৃষ্ঠা আছে ১৯৫৮ সালের সঙ্কট নিয়ে গবেষণার।
ওই সময় তাইওয়ানের জাতীয়তাবাদী সরকার নিয়ন্ত্রিত দ্বীপে গোলা নিক্ষেপ শুরু করেছিল কমিউনিস্ট চীন। ১৯৬৬ সালে ওই গবেষণাকর্ম লিখেছিলেন মার্কিন সরকারের থিংক ট্যাংক র‌্যান্ড করপোরেশনের মর্টন হ্যালপারিন। ১৯৭৫ সালে তার কিছু অংশ সরিয়ে নিয়ে তা ডিক্লাসিফায়েড করা হয়। যেসব অংশ সেন্সর করে বাদ দেয়া হয়, তাতে দেখা যায়, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল নাথান টুইনিংসহ সামরিক নেতারা এটা অনুধাবন করেছিলেন যে- পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। টুইনিং আরো একটি অংশে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, চীন যদি তাইওয়ানে হামলা চালানো বন্ধ না করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চীনের গভীর পারমাণবিক হামলা চালানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কমিউনিস্ট চীন ওই বোমা হামলা থেকে বিরত হয়। ফলে আর কিছু হয়নি। অনলাইন বিবিসি অবলম্বনে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com