চলনবিলের ঐতিহ্য নৌকা। বর্ষাকালে চলনবিল এলাকার মানুষের পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। চলনবিলে প্রবাদ আছে ‘বছরে ১২ মাসের ৪ মাস নায়ে, আর ৮ মাস পায়ে।’ অর্থাৎ বিল এলাকার মানুষের শুষ্ক মৌসুমের ৮ মাস পায়ে হেঁটে এবং বর্ষা মৌসুমের ৪ মাস নৌকায় চলাচল করতে হয়। তাই বর্ষা সামনে রেখে নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে চলনবিল এলাকায়। জানা গেছে, চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, গুরুদাসপুর, চাটমোহর ও আত্রাই উপজেলায় বসবাসরত বেশিরভাগ গ্রামের মানুষ বর্ষায় ৩ থেকে ৫ মাস, বা নিচু এলাকায় এর চেয়েও র্দীঘ সময় ধরে পানিবন্দি থাকে। এসব পানিবন্দি মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তাই বর্ষা এলেই এলাকায় নৌকার কদর বেড়ে যায়, সঙ্গে কদর বাড়ে নৌকা তৈরির কারিগরদেরও। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই শুরু হয় নতুন নৌকা তৈরি আর পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ। সম্প্রতি চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারিগররা নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামতে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা তৈরির কারিগররা জানান, চলনবিল এলাকায় সাধারণত শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা ও বাইচের এই ৩ ধরনের নৌকা তৈরি হয়। তবে বিল এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মালবাহী এবং যাত্রীবাহী নৌকার কদর বেশি। এ ছাড়াও ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা মাছ ধরার ও বাইচের নৌকা তৈরি করছে কারিগররা। বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নৌকা চালকদের আঞ্চলিক ভাষায় মাঝি বলা হয়। মাঝিরা নিজের আবার অন্যের নৌকা চুক্তিভিত্তিক চালিয়ে অর্থ উর্পাজন করেন। চলনবিলের মধ্যস্থলে অবস্থিত লালুয়ামাঝিরা গ্রামের মাঝি মো. শরিফুল ইসলাম জানান, একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা তৈরি করতে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা বা নৌকার পরিধি অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হয়। তাই অনেকে ইচ্ছা করলেও বড় নৌকা তৈরি করতে পারেন না। যারা অর্থাভাবে নৌকা তৈরি করতে পারে না তারা চুক্তিভিত্তিক অন্যের নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নৌকা তৈরি কারিগর দুলাল হোসেন জানান, সারা বছর তাদের বসে অলস সময় পার করতে হয়। বর্ষা মৌসুমের ৩-৪ মাস তারা ব্যস্ত সময় পার করেন।