শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

কাগজে আছে আইসিইউ, হাসপাতালে নেই!

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১

দেশে চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মেলে। শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশে প্রতিদিনই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বাড়ছে। দেশে করোনা আক্রান্তদের নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ পাওয়া যায়। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এই প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাট্রিবিউন অন লাইন নিউজ পোর্টালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বিশেষজ্ঞরা করেন,রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া গেলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতো। তারা বলছেন, শুরু থেকেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) কম ছিল। মহামারিকালে এর সংখ্যা যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনা আক্রান্তদের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড রয়েছে এক হাজার ১৯৫টি। এর মধ্যে ঢাকায় আছে ৩৮৪টি। আট বিভাগের যত হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তার সবগুলোতে আইসিইউ নেই। অথচ, বর্তমান ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তরা দ্রুত জটিল অবস্থায় চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা রোগীদের শতকরা ৮০ শতাংশের মধ্যে মৃদু লক্ষণ দেখা দেয়। তাদের হাসপাতালে যেতে হয় না। ১৫ শতাংশের উপসর্গ তীব্র হয় ও হাসপাতালে যেতে হয়। ৫ শতাংশের অবস্থা হয় গুরুতর। তাদের আইসিইউর পাশাপাশি দরকার হয় ভেন্টিলেটরেরও।
কাগজে আছে বাস্তবে নেই: স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ১০টি। কিন্ত আইসিইউ নামে ১০টি বেড থাকলেও চারটিতে নেই হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা। ফলে আইসিইউ বেডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মুমূর্ষু রোগীরা। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, ‘১০টি আইসিইউর চারটিতেই হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। গুরুতর রোগীদের এসব বেডে এনে লাভ হবে না।’ কুষ্টিয়ারও একই অবস্থা। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চারটি আইসিইউ রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য অধিদফতরের। কিন্তু এক বছরেও বেডগুলো চালু হয়নি। মুমূর্ষু রোগীদের ঢাকা অথবা রাজশাহীতে নিতেই হচ্ছে। রাস্তায় সময়ক্ষেপণেও রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘বেড থাকলেও সেগুলো পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ নয়। এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হওয়ার পর আইসিইউ সমস্যার সমাধান হবে।’
আট বিভাগের আইসিইউ চিত্র: ঢাকা মহানগরীতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আইসিইউ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগের ১২টি জেলার মধ্যে জিনজিরা ২০ বেড হাসপাতালে আইসিইউ নেই। আইসিইউ নেই কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও শরীয়তপুরেও। মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এ জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালসহ কোনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই আইসিইউ নেই। আইসিইউ বসাতে ভবনে আরেকটি তলা তৈরির কাজ চলছে। তবে আইসিইউ কবে চালু হবে তা বলতে পারেননি তিনি।
রংপুর বিভাগে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় ১৫টি হাসপাতালে। এর মধ্যে আইসিইউ আছে চারটিতে। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ (আইসোলেশন সেন্টার) এবং রেলওয়ে হাসপাতাল, রংপুর তাজহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, হারাগাছ ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও আইসিইউ নেই। কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ এ জেলায় সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে কোনও আইসিইউ নেই। গুরুতর রোগীদের যেতে হয় ৫৫ কিলোমিটার দূরের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খুলনা বিভাগের নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কোনও হাসপাতালে আইসিইউ নেই। অথচ এ বিভাগে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক মৃত্যু আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩টি এবং জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে মাত্র দুটি আইসিইউ বেড।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত চারটি হাসপাতালের মধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ নেই। এ বিভাগের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালেও নেই আইসিইউ। এ ছাড়া ফেনীর সোনাগাজী মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা হাসপাতাল, নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম করোনা সেন্টার, লক্ষীপুর ১০০ শয্যা সদর হাসপাতাল, চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালেও আইসিইউ নেই। নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে সাময়িকভাবে স্থাপিত কোভিড-১৯ হাসপাতালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুটি ভেন্টিলেটর মেশিন দেন। সেখানে আইসিইউ বেড রয়েছে দুটি। কিন্তু জনবলের অভাবে সেগুলো চালু করা যায়নি বলে জানালেন হাসপাতালটির সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ।
তিনি বলেন, ‘আইসিইউর প্রয়োজন ছিল এমন অন্তত পাঁচজন রোগীকে আমরা রেফার করেছিলাম ঢাকায়, কিন্তু তারা পথেই মারা গেছেন।’ এক রোগীর স্বজন নাহিদ আলম বলেন, আমার চোখের সামনে একজন ডাক্তারের বাবা মারা গেছেন। এখানে আইসিইউ না পাওয়ায় চট্রগ্রাম নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর হাসপাতাল, নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, নাটোর আধুনিক হাসপাতাল, পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল ও জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে আইসিইউ নেই। বরিশাল বিভাগের সাতটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল এবং ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল অর্থাৎ পাঁচটি হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ নেই। এদিকে, সিলেট বিভাগের সাতটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও আইসিইউ রয়েছে মাত্র দুটি হাসপাতালে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com