কঠোর লকডাউন আর করোনার সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় কোনবানি ঈদের ডামাডোল শুরু হয়নি। তাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গরম মসলার বাজার এখনো ‘ঠান্ডা। কঠোর লকডাউন এবং করোনা সংক্রমণের পারদ চড়তে থাকায় এখনো কেনাবেচা স্বাভাবিক বাজারের চেয়েও ৫০ শতাংশ কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানেই গরম মসলার ব্যবহার বেশি। করোনার কারণে এসব অনুষ্ঠানে তালা পড়ায় মসলার বড় অংশই অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। ফলে ঈদের জন্য মসলার পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে উঠেছে। এসব মজুদ পণ্য বিক্রি নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঈদের বাজার ধরতে দাম বাড়ানোর চেয়ে কমানোর চেষ্টাই বেশি তাঁদের। কারণ আর ১৩ থেকে ১৪ দিন বাকি থাকলেও এখনো ঈদের বিক্রিই শুরু হয়নি। বাকি সময়টাতে খুব ভালো কিছুর আভাসও মিলছে না। এদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে টেলিবাণিজ্য। আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা নিয়মিত পাইকারি বাজারে আসতেন। এখন করোনা অতিমারির মধ্যে মোবাইল ফোনেই পণ্যের চাহিদার (অর্ডার) কথা জানাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ব্যবসায়ী পণ্যের দাম হিসাব করে টাকার অঙ্ক জানিয়ে দিলে সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ব্যবসায়ী সেই পণ্য গাড়িতে করে পৌঁছে দিচ্ছেন। এভাবেই চলছে ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীগঞ্জ ও রামচন্দ্রপুর বড় পাইকারি বাজারগুলোতে করোনা দুঃসময়ের ব্যবসা-বাণিজ্য। যদিও ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ থাকায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তবে বিকল্প হিসেবে বাকিতে বিক্রির প্রক্রিয়া চালু রেখে তা পুষিয়ে নিচ্ছেন উভয়েই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে কোরবানি ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হয় ১৫ থেকে ২০ দিন আগে। শেষ হয়ে যায় ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই। এরপর খুচরা বাজারে জমে ওঠে বিকিকিনি। কিন্তু এবার ঈদের ব্যবসার মূল সময়টাতে কঠোর লকডাউন থাকায় সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক খুচরা ব্যবসায়ীও আতঙ্কে পাইকারি বাজারে ঢুঁ মারছেন না। মোবাইল ফোনেই অর্ডার দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। জানতে চাইলে মুরাদনগর বাজারের গরম মসলা ব্যবসায়ী উজ্জল বনিক বলেন, ‘ব্যাংক বন্ধ এবং ধরপাকড় আতঙ্কে গত নয় দিন বাজারে মানুষ উঠছে না। এদিকে বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় হচ্ছে এখন আমাদের ব্যবসা করার। লকডাউন এর কারণে বিয়ে-শাদী ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সব মিলিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। জানা যায়, গরম মসলার মধ্যে কোরবানিতে সবচেয়ে বেশি লাগে জিরা। পাইকারি বাজারে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ভারতীয় জিরা বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। ইরানি জিরা কম পাওয়া যাওয়ায় দামও থাকে বেশি। বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। মসলার মধ্যে সবচেয়ে দামি এলাচের বর্তমান পাইকারি দাম মানভেদে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এলাচ আসে ভারত ও গুয়াতেমালা থেকে। দুই দামের এলাচেই মানের তারতম্য রয়েছে। এ ছাড়া গোলমারিচ ৪৮০ থেকে ৫০০, চায়না দারুচিনি ৩২০, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, লবঙ্গ ৯২০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরম সমলার দাম কমলেও উল্টো গতি নিত্য প্রয়োজনীয় আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বাজারে। ঈদের আগে এই তিন মসলার ব্যাপক চাহিদা বাড়ে। গেল এক সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।