করোনার এই দুঃসময়ে বুকের উপর ঝুলে থাকা কনুই অব্দি প্লাস্টার জড়ানো বাম হাত আর ডান হাতে একটি পলিথিন ব্যাগে আকাশি রঙের কিছু মাস্ক নিয়ে পথে পথে ঘুরছে একটি শিশু। তার সমবয়সী শিশুরা যখন নিরাপদ সুন্দর আগামীর জন্য ঘরে অবস্থান করছে তখন ভাঙা হাতের চিকিৎসার টাকা যোগাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মাস্ক বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে দশ বছর বয়সী নুরনবী বাবু। এই টাকা দিয়ে সে ভাঙা হাতের চিকিৎসা করাবে। বুধবার দুপুরে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কলেজ রোডে দেখা হয় নুরনবীর সাথে। সে সময় নুরনবী মায়াভরা করুণ চাহুনিতে পথচারীদেরকে তাঁর নিকট থেকে মাস্ক কিনতে কাকুতি-মিনতি করছিল। মলিন চেহারার ছোট্ট এই শিশুটির নিকট থেকে মাস্ক কিনতে অনীহা প্রকাশ করছিল পথচারীরা। চিকিৎসার টাকা জোগাতে এছাড়া আর কি-বা করতে পারতো ছোট্ট এই শিশুটি! নুরনবী জানায়, পাঁচ দিন আগে জাম গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার বাম হাতটি ভেঙে যায়। নানী ডাক্তারের কাছে নিয়ে হাত প্লাস্টার করিয়ে এনেছেন। ওষুধ কেনার টাকা নাই। বাবা অছিম উদ্দিন মারা গেছেন বেশ কিছুদিন আগে। মা সোনাভান মানসিক ভারসাম্যহীন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সে। ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামে নানীর কাছে থাকে। নুরনবী বাগভান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে । প্লাস্টার জড়ানো ভাঙা হাত নিয়ে লকডাউনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছ কেন? এমন প্রশ্নে নুরনবী জানায়, ভাঙা হাতের চিকিৎসার টাকা জোগাতে মাস্ক বিক্রি করছি। দৈনিক কতগুলো মাস্ক বিক্রি হয় জানতে চাইলে সে জানায়, ঠিক নাই, কোনদিন দুই/চারটা হয়, কোনদিন একটাও বিক্রি হয়। ছোট্ট মানুষ, ভাঙা হাত, অসুস্থ শরীরে রাস্তায় রাস্তায় হাটতে কষ্ট হয়না প্রশ্নে মলিন হাসিতে নিশ্চুপ থাকে নুরনবী। সেই হাসির অর্থ-নুরনবীদের কষ্ট হয়না, তাঁদের কষ্ট থাকতে নেই। বাগভান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশিউল আলম জানান, নুরনবীর বাবা মারা গেছে, মা মানসিক ভারসাম্যহীন। নুরনবীরা দুই ভাই তাঁর নানীর কাছে থাকে। নুরনবীর নানী বিবিজন অত্যন্ত গরিব। স্কুল বন্ধ থাকায় নুরনবীর হাত ভাঙার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিত্তবান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে নুরনবী উপকৃত হবে।