সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে ফরিদপুরে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল বাবা ছিলেন বাসচালক মা দরজি, ছেলে লন্ডনের মেয়র ওবায়দুল কাদেরের ভাই শাহাদাতের মনোনয়ন বাতিল হাওরের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ অপারেশনের নামে ‘টর্চার সেলে’ পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন: হারুন

করোনায় একদিনে রেকর্ড ২৩০ জনের মৃত্যু

শামছুল আরিফ
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

রাজধানীতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাস সারাদেশে আরও ২৩০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ হাজার ৪১৯ জনে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১১ হাজার ৮৭৪ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনে। এর আগে শুক্রবার (৯ জুলাই) দেশে ২১২ জনের মৃত্যু হয়। ১০ জুলাই দেশে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়। ৮ জুলাই করোনায় দেশে ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়। ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। গতকাল রোববার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এবং এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়।
রাজধানীতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে: রাজধানীতে করোনার পাশাপাশি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। গত মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭১ জন। আর চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনে রোগীর সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। মাসের শুরুতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৮ জনে। রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত শনিবার (১০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসানসহ একাধিক স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, করোনার উচ্চ সংক্রমণকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
তারা বলেন, বর্তমানে বর্ষাকাল অর্থাৎ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রজননকাল। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ও পরিত্যক্ত ভবন, বাসার ছাদ, আঙিনা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার এবং ফ্রিজ-এসির পরিষ্কার পানি জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশা জন্মে। তাই পরিষ্কার পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন না বাড়ে সে লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন এলাকা ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ৬৭৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭১ জন এবং ১০ জুলাই পর্যন্ত ৩০২ জন রোগী ভর্তি হন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৯৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৮ জন রোগীর মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ট হাসপাতালে ১১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঁচজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) একজন, বাংলাদেশ মেডিকেলে একজন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে আটজন, স্কয়ার দুইজন, ল্যাবএইডে দুইজন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ধানমন্ডিতে তিনজন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে দুইজন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, কাকরাইলে দুইজন, খিলগাঁও খিদমা হাসপাতালে একজন এবং আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচজন, আজগর আলী হাসপাতালে একজন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একজন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে একজন, পপুলার হাসপাতালে একজন এবং আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর আতঙ্কে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ কার্যত ঘরবন্দি হয়ে আছে। মহামারিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। শনিবার (১০ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীতে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৪৬৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং আট হাজার ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা ও উপসর্গ বিভিন্ন জেলায় প্রাণ গেলো ১৯৩ জনের: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে- খুলনায় ১৪ জন, কুষ্টিয়ায় ১৭ জন, নড়াইলে ৭ জন, যশোরে ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৬ জন, মেহেরপুরে ৫ জন, মাগুরায় ৪ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন এবং বাগেরহাটের ২ জন রয়েছেন। রাজশাহীর ১০ জন, নাটোরের ৮ জন, নওগাঁর ২ এবং পাবনার একজন রয়েছেন। রংপুরে ৬ জন, গাইবান্ধায় ৩ জন, দিনাজপুরে ৫ জন এবং ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে ৭ জন মারা যান। চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন ১৪ জন। যা এই জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। এছাড়া ময়মনসিংহে ১৪, বগুড়া ১৭, নোয়াখালী ৭, বরিশালে ১০ জন, ফরিদপুরে ১১ জন, টাঙ্গাইলে ৬ জন, নেত্রকোণায় ২ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন এবং শেরপুর, জামালপুর ও বরগুনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে নারীর মৃত্যু, সাবধান বার্তা: একইসঙ্গে কোভিডের দুটি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব বলে সাবধান বার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ নারী একইসঙ্গে আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর কোভিড নিয়ে এখন নতুন আতঙ্ক জুড়ে বসেছে। গত মার্চ মাসে বেলজিয়ামে মারা যান ওই নারী। তিনি ভ্যাকসিন নেয়া ছিলেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি একই সময়ে দুটি ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, এমন ঘটনা নিয়ে এবারই প্রথম হইচই শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে তার এই ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইউরোপের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ কংগ্রেসে। যদিও একইসঙ্গে দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের বিষয়টি আগেও শোনা গিয়েছিল।
জানুয়ারিতে ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, সেখানে এক রোগী একই সময়ে দুই ধরনের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। পর্তুগালেও ১৭ বছরের এক তরুণের একইসঙ্গে দুই ধরনের কোভিডে আক্রান্তের ঘটনা জানিয়েছিলেন দেশটির গবেষকরা। বেলজিয়ামে মারা যাওয়া ওই প্রবীণ নারী ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে পরিচিত দুটি ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি মৃদু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে ক্রমশই তার ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে। তার কেস নিয়ে কাজ করা গবেষক দলের প্রধান ড. অ্যানি ভ্যাঙ্কিরবারঘেন বলেন, ওই সময় বেলজিয়ামে দুইটি ভ্যারিয়েন্টই ছড়াচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী ভিন্ন দুইজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com