বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

কঠোর লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত আসছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

চলমান কঠোর লকডাউন ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহন। খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। কোরবানির পশু কেনাকাটা ও ঈদে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার (১২ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিধিনিষেধ শিথিল হলেও বন্ধ থাকবে বেসরকারি অফিস। আর ভার্চুয়ালি চলবে সরকারি অফিস।
ঈদে যাওয়া যাবে বাড়ি: করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহন। খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। কোরবানির পশু কেনাকাটা ও ঈদে মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল সোমবার (১২ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
ঈদে সীমিত আকারে চলতে পারে গণপরিবহন: সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে এ বিষয়ক নথি অনুমোদন হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছে। ঈদ উপলক্ষে শিথিল শাটডাউনের আট দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক আসন ফাঁকা রেখে চলবে সব গণপরিবহন। খুলে দেয়া হবে দোকানপাট, শপিং মল। এ সময়ে সরকারি অফিস ভার্চুয়ালি খোলা থাকলেও বন্ধ থাকবে বেসরকারি অফিস। ১৫ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত শাটডাউন শিথিলের আদেশ কার্যকর থাকবে। ঈদের পর আবারও দুই সপ্তাহের শাটডাউনে যাবে দেশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিয়ে যাত্রা নির্বিঘœ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, রোজার ঈদে মানুষজন যেভাবে বাড়ি গিয়েছেন, সে বিষয়গুলোকে এবার চিন্তায় রেখেছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। তাই গণপরিবহন খুলে দেয়াকে অপেক্ষাকৃত ভালো সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন তারা।
রোজার ঈদে বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রেখেছিল সরকার। কিন্তু এসব বাধা উপেক্ষা করে ঈদের আগে ঘরমুখী হয় মানুষ। ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছিল সরকার। কর্তৃপক্ষের অনুরোধ তোয়াক্কা না করে বাড়িমুখী হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। গত ১২ মে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে দুটি ফেরি থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পাঁচজনের মৃত্যুও হয়। ওই ঘটনায় পদদলিত হয়ে আহত হয় অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনা এড়াতেই এবারের ঈদে গণপরিবহন চালু রাখতে চাচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে চলমান শাটডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে আসা বারণ। রিকশা ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। এ অবস্থা চলবে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত। মানুষের অযাচিত চলাচল ঠেকাতে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়কে পড়তে হচ্ছে পুলিশি তল্লাশির মুখে। শাটডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে আছে বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সবই চলছে ঢাকার সড়কে: রাজধানী ঢাকার সড়কে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহন ও জনসাধারণের বাইরে বের না হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা থাকালেও তা মানা হচ্ছে না। সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় কোথাও কোথাও যানজটও দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছে যানবাহানগুলোকে। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর মিরপুর, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, আসাদগেট, গ্রীন রোড, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, তেজঁগাও, কাকরাইল, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে মূল সড়কে বাধাহীনভাবে প্রায় সব ধরনের পরিবহন চলাচল করছে। শুধুমাত্র গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। অনেক সিএনজি, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের ওসি দুলাল হোসেন বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলরত অধিকাংশ পরিবহনকে আটকে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। যারা যৌক্তিকতা দেখাতে পারছে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, বাকিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শুরুতে অনেকে বিনা কারণে বা লগডাউন দেখতে ঘরের বাইরে বের হলেও মানুষ এখন সচেতন হয়ে গেছে। বিনা করণে বাসার বাইরে বের হওয়া কমে গেছে।’
এদিকে তেজাঁগাওয়ে অন্যান্য দিন কড়া নজরদারি থাকলেও সোমবার ঢিলেঢালা দেখা গেছে। মাঝে মাঝে গাড়ি আটক করে গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে। একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে ঢাকার বিভিন্ন প্রধান সড়কগুলোতে।
ঈদের আগেই চালু গণপরিবহন, খুলতে পারে শপিংমল: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে চলমান বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল করা হচ্ছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাটসহ প্রায় সবকিছুই চালুর অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কোরবানির হাটও চালুর অনুমতি দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে যে কোনো সময়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানিয়েছে, আগামী ১৪ জুলাই শেষ হচ্ছে দুই সপ্তাহের চলমান বিধি-নিষেধ। এই দুই সপ্তাহের ফলাফল দেখেই মূলত ঈদ সামনে রেখে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বিধি-নিষেধের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। এরমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুরহাট বসানো, শপিংমল খুলে দেওয়া এবং সিটি করপোরেশন ও জেলার ভেতর বাস চলার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীবাহী লঞ্চ-ট্রেন বন্ধ রাখা হবে। আর ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। আর ঈদের পর আবারও কঠোর বিধি-নিষেধ দেওয়া হতে পারে। আসন্ন ঈদ সামনে রেখে চলমান বিধি-নিষেধের বিষয়ে সোমবারের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে জানিয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, পরদিন মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এসব নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। প্রথমে ৭ জুলাই পর্যন্ত তা থাকলেও পরে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, যা আগামী বুধবার (১৪ জুলাই) শেষ হওয়ার কথা। তার আগেই এই বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়ে আলোচনা করছে সরকার। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ শিথিল করলে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা নিয়েও আশঙ্কা আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com