বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাসের। গবাদি পশু পালনের প্রধান খাদ্য হিসেবে এ ঘাসের চাহিদা এখন মোরেলগঞ্জ জুড়ে। আর নেপিয়ার চাষ করে অনেক পরিবারেই চলছে জীবিকা নির্বাহ। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাইজোড়া গ্রামে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করে সফল হয়েছেন শিক্ষক রায়হান মুস্তাকিম। ১বিঘা জমিতে চাষ করা ঘাস থেকে নিজের পশু খামারের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত ঘাস বিক্রয় করে বাড়তি আয় করছেন তিনি। রায়হান মুস্তাকিম শিক্ষক পরিবারের সন্তান হিসেবে কৃষির প্রতি তার আলাদা একটা টান রয়েছে। কৃষি কাজের মাধ্যমে কীভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় এবং এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন তিনি। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গবাদি পশু পালনকারীদের কাছে হাইব্রিড জাতের নেপিয়ার ঘাস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মোরেলগঞ্জের অনেক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ঘাসের চাষ করছে। অনেকেই পতিত জমিতে এবং মধ্যবর্তী ফসলের মাঝে নেপিয়ার চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর এ নেপিয়ার চাষের কারণে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা যেমন মিটছে পাশাপাশি অনেক পরিবারই জীবিকা নির্বাহ করছে এ ঘাস চাষ করে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে এ বছর প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হয়েছে। মোরেলগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাইজোড়া গ্রামে ঘাসচাষি ’’যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম’’র যুগ্ম আহবায়ক শিক্ষক রায়হান মুস্তাকিম বলেন এক বিঘা জমিতে বছরে নেপিয়ার ঘাষ চাষ করতে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে ৬০-৭০ টাজার টাকা লাভ হয়।নেপিয়ার একটি হাইব্রিড, দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ উৎপাদন সম্পন্ন স্থায়ী ঘাস। এ ঘাসকে একটি অতি উৎকৃষ্ট ঘাস বললেও ভুল হবে না। এটি গবাদিপশুর জন্য একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঘাস। সাধারণ ঘাসে যেখানে মাত্র ৮-১২% ক্রুড প্রোটিন থাকে সেখানে নেপিয়ার ঘাসে ১৬-১৮% ক্রুড প্রোটিন পাওয়া যায়। নেপিয়ার উচ্চ ফলনশীল ঘাস, যা বছরে ৬-৮ বার কাটা যায় এবং একবার রোপণ করলে ৬-৮ বছর ফলন পাওয়া যায়। প্রতি একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে বছরে ১৮০-২০০ মেঃ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায় অর্থাৎ এক একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে অনায়াসে ২০-২২ টি গাভীর একটি খামারের সারা বছরের কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ক্রেতারা জানান, এ ঘাস গরুকে খাওয়ালে ভাল দুধ হয় এবং শরীরও হৃষ্টপুষ্ট হয়। মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জি এম কুদ্দুস জানান- নেপিয়ার ঘাসের পাতা চওড়া, মসৃণ ও সবুজ এবং কান্ড লম্বা, রসালো ও মোটা, গবাদিপশুর জন্য খুবই আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু এবং উচ্চ ক্রুড প্রোটিন সমৃদ্ধ। নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিমান ও উৎপাদন দক্ষতা অন্যান্য জাতের ঘাসের তুলনায় অধিক এবং শীতকালেও উৎপাদনের ধারাবাহিকতার কারণে উঁচু জমিতে এ ঘাস চাষ করে সারা বছরই গবাদিপশুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।এ ঘাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রাণি সম্পদ অফিস প্রতিবছর উন্নত জাতের ঘাস চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।তিনি আরও বলেন, কৃষকদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে মিটিং ও চাষের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন কৃষকের সাথে সরাসরি কথা বলে জানা গেছে তারা সবাই এই ঘাস চাষ করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে, যা অন্য কোনো ফসল চাষ করে পায়নি। তারা এই ঘাস চাষের মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন দেখছে। সরকারী সহযোগীতা ও সহজশর্তে ঋণের সুবিধা পেলে এ ঘাস চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।