বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

লেখাপড়া করে বড় হবার স্বপ্ন দেখে হিলির প্রতিবন্ধী দুই বোন

মোসলেম উদ্দিন (হিলি) দিনাজপুর :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

ইচ্ছে শক্তিই বড়। দেহের বৃদ্ধি বা বয়সের বাড়ন্ত বড় বিষয় নয়। এমনি ইচ্ছে শক্তি নিয়ে লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে দিনাজপুরের হিলির বাবা হারা এতিম দুই প্রতিবন্ধী বোন মরিয়ম এবং বেবি। হিলি দক্ষিণ বাসুদেবপুর (মহিলা কলেজ পাড়া) গ্রামের মৃত প্রতিবন্ধী মুন্নাফ হোসেনের মেয়ে মরিয়ম বেগম(২০) ও বেবি খাতুন(১৭)। মরিয়ম গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর বেবি এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী। প্রায় ১০ বলে হলো বাবা মারা গেছে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের চালানোর উপার্জনের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়ে মা সাইদা বেগম। সংসারে নেমে আসে অভাব-অনঠন, তবু থেমে যায়নি মা সাইদা। খেয়ে না খেয়ে, দুই মেয়েকে নিয়ে শুরু করেন সংগ্রামী জীবন। শত কষ্টের মাঝেও চালিয়ে গেছেন দুই প্রতিবন্ধী মেয়ের লেখাপড়া। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। আজ মেয়েরা দেহের দিকে বড় না হলেও, ইচ্ছে শক্তিতে বেড়ে উঠেছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে তাদের নিয়ে মায়ের ভাবোনা। লেখাপড়া করাতে আজ হিমশিম খাচ্ছে মা। দুই বছর যাবৎ প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে তাদের। আর সেই কার্ডের টাকা দিয়ে কোন রকম চলছে, মরিয়ম ও বেবির লেখাপড়ার খরচ। এতে করে তো আর জীবন চলে না। সমাজের আট-দশ জন স্বাভাবিক মেয়েদের মতো জীবন সাজার ইচ্ছে তাদের। লেখাপড়া করে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই এই দুই প্রতিবন্ধী বোন। সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখে তারা। আর অন্য মেয়েদের মতো লেখাপড়া করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে চাই তারা। প্রতিবন্ধী মরিয়ম বলেন, আমরা অসহায় গরীব মানুষ, বাবা তো বেঁচে নেই। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না। শত কষ্টের মাঝে আমরা দুই বোন লেখাপড়া ছাড়িনি। টাকার অভাবে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি। হয়তো আর লেখাপড়া করতে পারবো না। প্রতিবন্ধী ছোট বোন বেবি বলেন, আমার অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছে জাগে। শরীরের দিকে বড় হতে পারবো না জানি? তাই ইচ্ছেটাকে বড় করতে চাই। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কি আর ইচ্ছে শক্তিটাকে বড় করা যায়? তবুও বসে থাকছি না। চলছি আপন মনে, মানুষের ঠক্কর খেয়ে খেয়ে আজ অনেকটাই বড় হয়েছি। শত বাঁধা বিঘœ অতিক্রম করে আজ আমি কলেজে পড়ছি। তবে যদি সরকার এবং দেশের অনেক হৃদয়বান মানুষ আমাদের দুই প্রতিবন্ধী বোনকে একটু সাহায্য সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা আমাদের ইচ্ছে শক্তিটাকে কাজে লাগাতে পারতাম। মা সাইদা বেগম বলেন, ১০ বছর হলো স্বামী মারা গেছে, অনেক কষ্ট করে দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে মানুষ করছি। আজ ওদের বয়স হয়েছে, কিন্তু শরীরের দিকে বড় না হলেও মনের দিকে ওরা অনেক বড়। তারা আমাকে সংসারের সকল কাজে সহযোগিতা করে। সংসারের কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া করে। আবার কলেজেও যায়। তাদের আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাদের অনেক ইচ্ছে আরও লেখাপড়া করবে। কিন্তু আমি তো আর পারছি না? কেউ যদি একটু সহযোগিতা করতো এবং মেয়েদের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে হইতো তারা আরও একটু এগিয়ে যেতে পারতো? হিলি মহিলা কলেজ পাড়ার দোকানদার আমিনুল ইসলাম বলেন, মুন্নাফ ভাইয়ের দুইটা প্রতিবন্ধী মেয়ে এই মহিলা কলেজে পড়ে। ওদের বাবা মারা যাওয়ার পরে তারা অনেক কষ্টে মানুষ হচ্ছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে তারা আজও লেখাপড়া করছে। তারা দেখতেও ছোট হলে বড়দের মতো নিজেদের বড় করতে চাই। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, সবি আল্লাহর সৃষ্টি, মেয়ে দুটো বেড়ে উঠেনি। কিন্তু আমরা কখনও তাদের অবহেলা করি না। তারা ছোট থেকেই খুবি ভদ্র এবং অমায়িক ও শান্ত মনের মানুষ। কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে না, সবাইকে সম্মান দিয়ে চলে। আর খুবি লাজুক প্রকৃতির তারা। গ্রামের সবাই তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে। ওরা লেখাপড়া করছে এটা আমাদের কাছেও অনেক ভাল লাগার বিষয়। তবে সরকারি ভাবে যদি তারা সাহায্য সহযোগিতা পাই তাহলে হইতো মেয়ে দুটো আরও এগিয়ে যেতো। এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, মহিলা কলেজ পাড়ার প্রতিবন্ধী দুই বোনকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি এবং জানি। আমি দুই বার পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। প্রথমেই মেয়র হওয়ার পর ঐপ্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। তাছাড়াও আমি পৌরসভার পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা করে আসছি। তাদের আচার-আচরণ দেখে আমি মুগ্ধ হই। তাছাড়াও তাদের লেখাপড়া আমার নিকট আরও ভাল লাগে। নিজেদের বড় করতে তাদের ভিতরে একটা ইচ্ছে শক্তি কাজ করছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com