ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাত থেকেই থেমে থেমে যানজট রয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব ও পশ্চিমে গাড়ি আটকা থাকায় শনিবার (১৭ জুলাই) ভোরে দুইবার টোল আদায় বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকেই ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে যানজট রয়েছে। মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব, এলেঙ্গা, টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে লকডাউন শিথিল ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বেড়েছে তিনগুণ। বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচল শুরু করেছে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত রয়েছে পরিবহনের ধীরগতি। এ ছাড়া সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে মহাসড়ক বর্ধিতকরণের কাজ চলমান থাকায় সেখানে সৃষ্টি হওয়া যানজট গিয়ে ঠেকেছে টাঙ্গাইল অংশে। এদিকে সেতুর দুই পাশে দীর্ঘ যানজট থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে রাতে দুই ঘণ্টা এবং ভোরে পর পর দুইবার টোল আদায় বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও চালকরা। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা কাঁচামাল সঠিক সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মহাসড়কে চলাচলাকারী চালকরা জানান, প্রতিনিয়তই টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত মহাসড়কটুকুতে যানজটে আটকা পড়তে হয়। এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আবার টাঙ্গাইল অংশ পার হতে পারলেও সিরাজগঞ্জ অংশে গিয়ে আটকা পড়তে হয়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, মহাসড়কে তিনগুণের বেশি পরিবহন চলাচল করছে। এতে গাড়ির চাপ যেমন বেড়ে গেছে তেমনি সিরাজগঞ্জ অংশে মহাসড়কের বর্ধিতকরণ কাজের কারণে সৃষ্টি হওয়া যানজট টাঙ্গাইল এসে থেমেছে। এতে পরিবহন সহজে সেতু পার হতে পারছে না। আবার সেতু কর্তৃপক্ষ শুক্রবার রাত ২টা থেকে ৪টার পর্যন্ত টোল আদায় বন্ধ রেখেছিল। এতে মহাসড়কে আরও পরিবহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে যানজটের বিষয় জানতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর ইসলামের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
গাজীপুরের দুটি মহাসড়কে যান চলছে থেমে থেমে: গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারণে গতকাল শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকেই এই দুটি মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রয়েছে কোরবানির পশু বহন করা গাড়ি। এজন্য দুটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে, দূরপাল্লার বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার কিছুটা লক্ষণ দেখা গেলেও যাত্রী ও পণ্যবাহী ছোট ছোট যানে তা মানা হয়নি। পশুবাহী যানবাহনগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি তেমন চোখে পড়েনি। গতকাল শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, টঙ্গী কলেজগেট, ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, হোতাপাড়া, মাওনা চৌরাস্তা, এমসিএ বাজার, জৈনাবাজার এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহন থেমে থেমে চলাচল করছে। সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসিএ বাজার এলাকায় লবণভর্তি ট্রাক উল্টে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ওপর উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলে দুইজন নিহত হয়। এ সময় কমপক্ষে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে রেকার দিয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রাকটি সরানোর কাজ করায় থেমে থেমে যান চলাচল করে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। মাওনা চৌরাস্তা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, মহাসড়কের এমসিএ বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময় যানবাহন বন্ধ ছিল। পরে স্বাভাবিক হয়। তবে যানবাহন কোথাও থেমে নেই বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের সচেতনতার কাজটিও করছেন পুলিশ সদস্যরা।
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক জানান, হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে বিট পুলিশও কাজ করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রত্যেক মোড়ে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অন্য গাড়িকে অতিক্রম করতে গাড়িগুলোকে বিশেষ সাবধান করা হয়েছে।
এদিকে, কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে মাঝে মাঝে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ সারি লক্ষ করা গেছে। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের ঢাকামুখী লেনে গাড়ির চাপ কম। তবে পশুবাহী গাড়ির চাপ থাকলেও জট নেই। কিন্তু ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানাবহনগুলোর লেনে প্রচ- চাপ। সড়কের বেশির ভাগ পয়েন্টে যানবাহন কখনও কখনও থেমে থেমে চলছে। সড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝপথ থেকে দূরপাল্লার কোনও পরিবহনেই ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনও যাত্রার করতে পারছেন না তারা। কোনও গাড়ি পাবেন কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। সড়কে অনেক গাড়ি কিন্তু সবই যাত্রীতে পূর্ণ। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সড়কে যানজট হচ্ছে। যানবাহনের চাপ বাড়লেও প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সমস্যা আর থাকতো না। এরই মধ্যে যানজট নিরসেন কাজ করছে পুলিশ। যখন গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়ে যায় তখন থেমে থেমে যান চলাচল করে, এছাড়া গাড়ি চলছে। তবে কোনও কোনও জায়গায় তা ধীরে ধীরে।’