বাগেরহাটের চিতলমারীতে কিশোর গ্যাংদের একটি অংশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা প্রভাবশালী, মাস্তান বা বড় ভাইদের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক সেবন করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার স্কুল কলেজের ছাত্রীও নারীদের উত্ত্যক্ত করাই তাদের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি ও ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর। এতে করে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে ইতিপুর্বে। তারই ধারা বাহিকতায় চিতলমারী সদর উপজেলার ভ্যান স্ট্যান্ড, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের নিকটে,হেলি প্যাড নিকট ফাঁকা রাস্তা, চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসা, মোয়াজ্জেনের চায়ের দোকান এবং মরহুম আব্দুল গনি খান সাহেবের কালভার্টের উপরে। এই স্থান সমুহে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের ১৫/২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষকে হয়রানি করে চলেছে। ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আড়ুয়াবর্নী ডর পাড়ার একটি দোকানের মালিকের মাদকাসক্ত ছেলেও তার পরিবারের ছত্রছায়ায় বহিরাগত এই গ্যাং পার্টির সদস্যরা রাত বিরাতে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা ছাত্রীও নারীদের উত্ত্যক্ত করা সহ এলাকায় অনেকদিন ধরে সাধারন মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃস্টি করছে। এদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননা। প্রতিবাদ করলেই প্রকাশ্যে হেনস্ত হতে হয়। অথবা রাত-বিরাতে উক্ত স্থানগুলোয় চলাচলের পথে তাদের টার্গেটকৃত লোকজনকে হাতুড়িপেটা, রডের আঘাত বা ধারলো অস্ত্রদিয়ে আঘাত করাসহ নানা ধরনের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। ইতিপুর্বে অনেকে এধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাদের হুমকির মুখে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। ওই গ্যাং দলটির সদস্যরা একে বারেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। শিক্ষার আলো এদেরকে স্পর্শ করেনি। নুন আনতে পান্থা ফুরায় এদের পরিবারের,শুধু ধান্দাবাজির ওপরে চলে এদের জীবিকা। এরা মোবাইলে টাকার বিনিময় জুয়া খেলায় আশক্ত,মাদক ব্যবসায় জড়িত, টাকার বিনিময় হায়ারে গিয়ে দুর্বল মানুষের বাড়ি ঘর দখল করে দেয়া,নস্টা নারী ফিট করে যে কোন লোককে ফাঁসানো এবং অর্থ আদায় করাসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে লিপ্ত এরা। এছাড়া এদের নেপাথ্যের মদদদাতার টার্গেটকৃত সাধারন মানুষকে শারীরিক নির্যাতন করে আধিপত্য বিস্তার করাই এদের মুল কাজ। এদের হাতে জিম্মিদশা থেকে বাঁচতে ভীত সন্ত্রাসস্ত ভুক্তভোগিও এলাকার নিরহ মানুষগুলো প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এব্যাপারে আড়ুয়বর্নীডর পাড়া গ্রামের চাকুরীজীবি বিপুলমুন্সী জানান, পবিত্র ঈদের দিন বিকেলে তিনি তার ভাইকে নিয়ে চিতলমারী মহিলা কলেজ সড়ক হয়ে মটর বাইকে বাড়ি ফেরার পথে মোয়জ্জেন শেখের ছেলে মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাং সদস্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে একটি ট্রাক চালিয়ে কোন প্রকার সাইড না দিয়ে তার চলন্ত বাইকটাকে চাপাদিতে চেস্টা করে। এ ভাবে প্রায় এক মাইল পথ পেরিয়ে বাড়ির সামনে ট্রাক রাখা হলে তিনি প্রতিবাদ করেন। প্রতি উত্তরে মাদকসেবী মিজানও মাসুদ দুই ভাই ও বাবা মোয়জ্জেন শেখ লাঠিসোটা নিয়ে তাদের হামলা চালায়। ভ্যান চালক আবুল কালাম ঠান্ডা জানান তার একমাত্র ছেলে আবু হামজা(১১) মোয়াজ্জেনের দোকানের সামনে গেলে তার মাদকাসক্ত ছেলে অতর্কিত ভাবে মাথায় বাড়িদিয়ে রক্তাত্ত জখম করে এরপর মুখবেঁধে ঘরে আটকে রাখে। পরে তার গোঙ্গানির শব্দশুনে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় স্থানীয়রা । এব্যপারে বিচার চাইতে গেলে গ্যাং সদস্যরা তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এ ব্যপারে চিতলমারী সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য মো: এব্রাহিম মুন্সী বলেন, বিষয়টি একদিনের নয়। এলাকার সকলে এদের ব্যপারে অবগত। অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে চায়না, দুর্বৃত্ত বা অপরাধি যে বা যারা হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। মানুষ সুখে শান্তিতে থাকুক এটাই কাম্য। চিতলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। কোন অপরাধের সাথে যে বা যারা জড়িত থাকুকনা কেন তাদের কঠোরহাতে দমন করা হবে। এব্যপারে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো: লিটন আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কিশোর গ্যাংও মাদকাসক্তদের কোন ছাড় নাই। এদের বাবা-মাকে দেখতে হবে তাদের ছেলে কি করছে- কোথায় যাচ্ছে। অপরাধিদের ছাড় হবেনা। প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে।